বর্তমান সময়ে স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওজন কমানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন ডায়েট, মেডিসিন বা ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করেন, তবে বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকর পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হলো ওজন কমাতে জিমের সঠিক ব্যবহার। বিশেষ করে যারা নতুন বা বিগিনার, তাদের জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং গাইডলাইন অত্যন্ত জরুরি।
জিমে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি:
জিমে নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করার আগে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ভুল প্রস্তুতির কারণে অনেকে দ্রুত হতাশ হয়ে পড়েন, ইনজুরির শিকার হন কিংবা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ হন। তাই একটি সফল ফিটনেস জার্নির ভিত্তি গড়ে উঠে সঠিক প্রস্তুতির ওপর।
১. মানসিক প্রস্তুতি
জিমে যাওয়ার আগে নিজের লক্ষ্য ও মানসিকতা পরিষ্কার করতে হবে। শুধু ওজন কমানো নয়, বরং একটি সুস্থ জীবনধারা গড়ার জন্য জিমে যাওয়া প্রয়োজন। মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে নিয়মিত ব্যায়ামের জন্য সময় ও পরিশ্রম দিতে।
-
নিজেকে প্রশ্ন করুন: “আমি কেন জিমে যেতে চাই?”
-
মনে রাখবেন, ফলাফল এক দিনে আসবে না। ধৈর্য ও স্থিরতা দরকার।
-
সামাজিক চাপ নয়, নিজের প্রয়োজন ও স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিন।
২. স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ
আপনার যদি আগে থেকেই কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট সমস্যা, হাঁটুব্যথা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি, তাহলে অবশ্যই জিমে যোগ দেওয়ার আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে করে আপনি জানতে পারবেন কোন ধরনের এক্সারসাইজ আপনার জন্য উপযুক্ত এবং কোনগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. লক্ষ্য নির্ধারণ
সঠিক প্রস্তুতির অন্যতম প্রধান ধাপ হলো স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা। যেমন:
-
ওজন কমানো
-
পেশি গঠন
-
ফিটনেস বজায় রাখা
-
শক্তি বাড়ানো
যখন লক্ষ্য নির্ধারিত থাকে, তখন আপনি একটি উপযুক্ত ওয়ার্কআউট রুটিন তৈরি করতে পারেন এবং ট্রেইনারও আপনার জন্য সঠিক গাইডলাইন দিতে পারবেন।
৪. সঠিক পোশাক ও এক্সেসরিজ নির্বাচন
আরামদায়ক এবং জিমের উপযোগী পোশাক আপনার ওয়ার্কআউট অভিজ্ঞতাকে অনেক ভালো করে তোলে। সঠিক পোশাক ও আনুষঙ্গিক জিনিস আপনার পারফরম্যান্স ও সেফটি নিশ্চিত করে।
-
আরামদায়ক স্পোর্টস পোশাক পরুন, যা শরীর ঘামে ভেজে গেলেও স্বস্তি দেয়
-
ভালো গ্রিপ ও কুশনযুক্ত স্পোর্টস জুতা ব্যবহার করুন, যাতে হাঁটু ও পায়ের চাপ কমে
-
সঙ্গে রাখুন: ওয়াটার বোতল, তোয়ালে, হেডফোন (যদি গান শুনে ওয়ার্কআউট করতে পছন্দ করেন)
৫. সঠিক জিম নির্বাচন
সফল ফিটনেস রুটিনের জন্য একটি ভালো মানের জিম নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন:
-
অভিজ্ঞ ও সার্টিফায়েড ট্রেইনার আছে কি না
-
প্রয়োজনীয় সব মেশিন ও সুবিধা আছে কি না
-
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ কি না
-
সময়সীমা ও সদস্যপদের খরচ আপনার সামর্থ্যের মধ্যে আছে কি না
৬. মৌলিক ফিটনেস জ্ঞান অর্জন
জিমে যাওয়ার আগে কিছু মৌলিক জ্ঞান থাকলে আপনি সচেতনভাবে ওয়ার্কআউট করতে পারবেন:
-
কোন ব্যায়াম কোন মাংসপেশিতে কাজ করে
-
ওয়ার্মআপ ও কুলডাউন কতটা গুরুত্বপূর্ণ
-
সঠিকভাবে ওজন তোলার কৌশল
-
এক্সারসাইজের ফর্ম বা পদ্ধতি ঠিক না থাকলে ইনজুরি হতে পারে
এই জ্ঞান ট্রেইনারের কাছ থেকেও শিখতে পারেন অথবা প্রামাণ্য ভিডিও ও ব্লগ থেকে ধারণা নিতে পারেন।
৭. খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনা
জিম শুরু করার কিছুদিন আগেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে অতিরিক্ত চিনি, তৈলাক্ত খাবার এবং সফট ড্রিংক বাদ দিয়ে প্রোটিন, ফাইবার ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ শুরু করুন।
জিমে যাওয়া শুরু করার আগে যদি খাদ্যাভ্যাস একটু ঠিক করা যায়, তাহলে শরীর দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং ফলাফলও দ্রুত দেখা যায়।
৮. সময় নির্ধারণ ও রুটিন তৈরি
জিমে কখন যাবেন তা নির্ধারণ করে নিন। সকালের সময় অনেকের জন্য উপযোগী, আবার কেউ সন্ধ্যায় সময় পান। নিজের রুটিন অনুযায়ী একটি সময় নির্ধারণ করে সেটি মেনে চলাই ভালো।
-
সকালে: শক্তি বেশি থাকে, মেটাবলিজম সারাদিন ভালো থাকে
-
সন্ধ্যায়: দিনের স্ট্রেস দূর হয়, ঘুম ভালো হয়
আপনি কখন বেশি এনার্জেটিক থাকেন, সেটাই আপনার উপযুক্ত সময়।
৯. প্রাথমিক ব্যায়াম শিখে রাখুন
যদি সম্ভব হয়, তাহলে ইউটিউব বা অনলাইন ট্রেইনিং দেখে কিছু বেসিক ব্যায়াম সম্পর্কে ধারণা নিয়ে জিমে যান। যেমন:
-
স্কোয়াট
-
লাংস
-
পুশ আপ
-
প্ল্যাঙ্ক
-
বারবেল বা ডাম্বেল তোলার সঠিক ফর্ম
এই প্রাথমিক জ্ঞান আপনাকে জিমের শুরুর দিনগুলোতে আত্মবিশ্বাস দেবে।
১০. সঠিক মানসিকতা নিয়ে জিম শুরু করুন
প্রথম কয়েকদিন হয়তো পেশিতে ব্যথা হবে, ক্লান্ত লাগবে কিংবা আগ্রহ কমে যেতে পারে। কিন্তু এটি স্বাভাবিক। নতুন যেকোনো অভ্যাস গড়ে তুলতে সময় লাগে। তাই মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে নিয়মিত থাকার জন্য।
ওজন কমাতে ব্যায়ামের পেছনের বিজ্ঞান:
১. ক্যালোরি এবং ফ্যাট: মূল ধারণা
আমাদের শরীরের ওজন নির্ভর করে একটি মৌলিক ব্যালেন্সের উপর:
ক্যালোরি ইন – ক্যালোরি আউট = ওজন পরিবর্তন
-
ক্যালোরি ইন: আমরা খাবারের মাধ্যমে যে শক্তি (Energy) গ্রহণ করি।
-
ক্যালোরি আউট: আমরা দৈনন্দিন কাজ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে যে শক্তি ব্যবহার করি।
যখন ক্যালোরি আউট > ক্যালোরি ইন, তখন শরীর তার সঞ্চিত শক্তি (যা মূলত ফ্যাট আকারে জমা থাকে) বার্ন করতে শুরু করে। এর ফলেই ওজন কমে।
২. ব্যায়াম কীভাবে ক্যালোরি বার্ন করে?
ব্যায়াম শরীরের মাংসপেশি, হৃদযন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় করে তোলে, ফলে বেশি শক্তি প্রয়োজন হয়। এই শক্তির চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে শরীর সঞ্চিত গ্লুকোজ এবং ফ্যাট বার্ন করে। এর ফলে ক্যালোরি কমে এবং ওজন কমার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
-
কার্ডিও ব্যায়াম (যেমন দৌড়ানো, সাইক্লিং, হাঁটা) সরাসরি ক্যালোরি বার্ন করে
-
ওয়েট ট্রেনিং বা স্ট্রেন্থ ট্রেনিং দীর্ঘমেয়াদে মেটাবলিজম বাড়ায়, যার ফলে শরীর বিশ্রামকালেও ক্যালোরি বার্ন করে
৩. ব্যায়াম ও মেটাবলিজমের সম্পর্ক
মেটাবলিজম হলো শরীরের সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে খাবার থেকে শক্তি তৈরি হয়। ব্যায়াম এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে:
-
বেসাল মেটাবলিক রেট (BMR): আপনি বিশ্রামে থাকলেও যে পরিমাণ ক্যালোরি বার্ন হয়, সেটি ব্যায়ামের মাধ্যমে বাড়ানো যায়
-
নিয়মিত ওয়ার্কআউট পেশির পরিমাণ বাড়ায় → পেশি বেশি হলে BMR বেশি → বেশি ক্যালোরি বার্ন
-
HIIT বা হাই ইনটেনসিটি ট্রেনিং করলে এক্সারসাইজ শেষে Afterburn Effect দেখা যায়, যেখানে শরীর ব্যায়ামের পরেও কয়েক ঘণ্টা ধরে ক্যালোরি বার্ন করে
৪. ব্যায়াম ও হরমোনের ভূমিকা
ব্যায়াম শরীরের বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ওজন কমানোয় প্রভাব ফেলে:
-
ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়: যা রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ফ্যাট কমায়
-
কোর্টিসল নিয়ন্ত্রণ করে: অতিরিক্ত স্ট্রেস হরমোন কোর্টিসল পেটের চর্বি বাড়ায়; ব্যায়াম তা নিয়ন্ত্রণে রাখে
-
এন্ডোরফিন ও ডোপামিন নিঃসরণ করে, যা মুড ভালো রাখে এবং ফিটনেস রুটিনে মোটিভেটেড থাকতে সাহায্য করে
৫. কার্ডিও বনাম স্ট্রেন্থ ট্রেনিং: কোনটি ভালো?
ব্যায়ামের ধরন | ক্যালোরি বার্ন | দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব | ফ্যাট বার্ন | পেশি বৃদ্ধি |
---|---|---|---|---|
কার্ডিও | বেশি (তৎক্ষণাৎ) | কম | হ্যাঁ | না |
স্ট্রেন্থ ট্রেনিং | মাঝারি | বেশি | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
উপসংহার:
সর্বোত্তম ফল পেতে দুই ধরনের ব্যায়ামের সমন্বয় সবচেয়ে কার্যকর। কার্ডিও শরীরকে দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করায় এবং স্ট্রেন্থ ট্রেনিং দীর্ঘমেয়াদে শরীরকে ফ্যাট বার্নিং মেশিনে পরিণত করে।
৬. ব্যায়ামের সময় ও ঘনত্ব
-
নিয়মিততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: সপ্তাহে অন্তত ৪–৫ দিন ব্যায়াম করলে তবেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে
-
ব্যায়ামের সময়: দিনে অন্তত ৩০–৬০ মিনিট সময় দিন
-
ইনটেনসিটি: মাঝারি থেকে হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর, তবে বিগিনাররা হালকা শুরু করে ধীরে ধীরে বাড়াতে পারেন
৭. ব্যায়াম না করে শুধু ডায়েট করলে?
শুধু ডায়েট করে ওজন কমানো সম্ভব, তবে সেটা টেকসই নয়। মাংসপেশি হারিয়ে যায়, মেটাবলিজম কমে যায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্যায়াম যুক্ত থাকলে:
-
ওজন টেকসইভাবে কমে
-
শরীর টোনড থাকে
-
মুড ভালো থাকে
-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
৮. ব্যায়াম ও ঘুমের সম্পর্ক
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ব্যায়ামের ফলাফলও কমে যায়। ঘুমের সময় শরীর পুনরায় গঠন হয় এবং হরমোনগুলো ব্যালেন্সে থাকে। ঘুম কম হলে:
-
ক্ষুধা বাড়িয়ে দেওয়া হরমোন (ঘ্রেলিন) বেড়ে যায়
-
ফ্যাট জমা বাড়ে
-
কর্মক্ষমতা কমে যায়
ফ্যাট বার্নের জন্য কার্যকর জিম এক্সারসাইজ:
১. ট্রেডমিল রানিং / ওয়াকিং (Treadmill Running/Walking)
-
কেন কার্যকর: কার্ডিও এক্সারসাইজের মধ্যে এটি অন্যতম সহজ এবং দ্রুত ক্যালোরি বার্নকারী।
-
টিপস: ১৫–৩০ মিনিটের হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT) ট্রেডমিলে করলে ফলাফল দ্রুত আসে।
যেমনঃ ১ মিনিট দৌড় + ১ মিনিট হাটা (বিকল্পভাবে পুনরাবৃত্তি)
২. বাইকিং (Stationary Bike)
-
কার্যকারিতা: হৃদস্পন্দন বাড়ায়, পায়ের মাংসপেশি গঠন করে এবং ক্যালোরি বার্ন করে।
-
মধ্যম মানের ব্যায়াম: শরীরের নিচের অংশে বেশি ফোকাস দেয়।
-
ডিউরেশন: ২০–৪০ মিনিট
৩. রো মেশিন (Rowing Machine)
-
ফুল-বডি ওয়ার্কআউট: হাত, পা, পিঠ, কাঁধ ও পেটের চর্বি কমায়।
-
হাই ইন্টেনসিটি + কম প্রেশার: জয়েন্টে চাপ পড়ে না।
৪. স্কোয়াট (Squats with or without weight)
-
ফ্যাট বার্ন: পায়ের বড় মাংসপেশিগুলো কাজে লাগায়, ফলে বেশি ক্যালোরি বার্ন হয়।
-
বাড়তি ওজন নিয়ে করলে স্ট্রেন্থ ও মেটাবলিজম আরও বাড়ে।
৫. ডেডলিফট (Deadlift)
-
পুরো শরীরের জন্য: পিঠ, গ্লুটস, হ্যামস্ট্রিং ও কোর সক্রিয় করে।
-
স্ট্রেন্থ ট্রেনিং: ফ্যাট বার্নের পাশাপাশি পেশি তৈরি করে, যা রেস্টিং মেটাবলিজম বাড়ায়।
৬. বেঞ্চ প্রেস (Bench Press)
-
উপরের অংশের চর্বি কমাতে সহায়ক – বুক, কাঁধ ও ট্রাইসেপসে কাজ করে।
-
স্ট্রেন্থ ট্রেনিং এর মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি ও চর্বি বার্ন হয়।
৭. ব্যাটল রোপস (Battle Ropes)
-
হাই ইন্টেনসিটি, শর্ট টাইম এক্সারসাইজ
-
২০ সেকেন্ড ইনটেন্স + ৪০ সেকেন্ড বিশ্রাম, ৪–৫ রাউন্ড
৮. ব্লার্পি (Burpees)
-
ফ্যাট বার্নে সেরা বডিওয়েট এক্সারসাইজ
-
১ মিনিটে প্রচুর ক্যালোরি বার্ন করে।
-
হার্ট রেট বাড়ায় + কার্ডিও + কোর ট্রেনিং একসাথে হয়।
৯. কেটলবেল সুইং (Kettlebell Swing)
-
হিপ, গ্লুটস ও কোরে কাজ করে
-
একসাথে স্ট্রেন্থ ও কার্ডিও উপকার দেয়।
১০. হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT)
-
কার্যকারিতা: সময় কম, কিন্তু ক্যালোরি বার্ন বেশি
-
উদাহরণ:
-
স্কোয়াট → জাম্পিং জ্যাক → পুশআপ → রেস্ট → পুনরাবৃত্তি
-
এক্সারসাইজের পরেও ফ্যাট বার্ন হয় (Afterburn effect)
-
ডায়েট ও নিউট্রিশন: জিমের অর্ধেক যুদ্ধ এখানেই:
কী খাবেন
-
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (ডিম, মুরগি, ডাল, গ্রিক ইয়োগার্ট)
-
কম কার্ব এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার (সবজি, ওটস, বাদাম)
-
প্রচুর পানি
-
ফলমূল, তবে অতিরিক্ত চিনি থাকলে পরিমিত খান
এড়িয়ে চলুন
-
ফাস্ট ফুড
-
সফট ড্রিংক
-
অতিরিক্ত চিনি
-
প্রসেসড খাবার
কখন খাবেন
-
জিমের ১ ঘন্টা আগে হালকা খাবার খান
-
ওয়ার্কআউটের পর ৩০–৪৫ মিনিটের মধ্যে প্রোটিন ও কার্ব মিশ্রিত খাবার খান
বিশ্রাম ও ঘুম – ওজন কমানোর গোপন অস্ত্র:
-
প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের হরমোন ব্যালেন্স করে
-
পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে ওজন কমা ধীর হয়
-
সপ্তাহে অন্তত ১ দিন পুরো বিশ্রাম দিন
বিগিনারদের জন্য বিশেষ টিপস:
১. প্ল্যান মেনে চলুন
নিজের জন্য সাপ্তাহিক ওয়ার্কআউট প্ল্যান তৈরি করুন এবং সেটি মেনে চলুন।
২. ওভারট্রেইনিং এড়িয়ে চলুন
প্রথম দিকে অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে শরীর ব্যথা পায় বা ইনজুরি হতে পারে।
৩. স্ট্রেচিং এবং ওয়ার্মআপ
প্রতিটি সেশনের আগে ও পরে হালকা ওয়ার্মআপ এবং স্ট্রেচিং করুন।
৪. প্রগ্রেস ট্র্যাক করুন
নিজের ওজন, বডি মেজারমেন্ট বা ফিটনেস প্রোগ্রেস নিয়মিত নোট করুন।
৫. সাপোর্ট গ্রুপ বা ট্রেইনার
একজন জিম পার্টনার বা প্রফেশনাল ট্রেইনার আপনাকে মোটিভেট রাখতে সহায়তা করতে পারে।
মোটিভেশন ধরে রাখার কৌশল:
-
ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
-
সাফল্য উদযাপন করুন (অবশ্যই স্বাস্থ্যকর উপায়ে!)
-
শরীরের পরিবর্তনগুলো ছবি বা ডায়েরিতে রেকর্ড করুন
-
সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিটনেস জার্নি শেয়ার করুন (ইচ্ছা হলে)
সাধারণ ভুল এবং সেগুলোর সমাধান:
ভুল | সমাধান |
---|---|
শুধু কার্ডিও করা | স্ট্রেন্থ ট্রেনিং যুক্ত করুন |
ডায়েট একদম বাদ দেওয়া | সঠিক ব্যালান্স বজায় রাখুন |
প্রতিদিন এক্সারসাইজ | ১–২ দিন বিশ্রামের সময় দিন |
ঝটপট ফল আশা করা | ধৈর্য ধরুন, কনসিসটেন্সি রাখুন |
জিমে গিয়ে ওজন কমানো সম্ভব, তবে তার জন্য চাই নিয়মিততা, সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক ডায়েট এবং ঘুম। বিগিনাররা যদি সঠিকভাবে শুরু করেন, তাহলে ধীরে ধীরে ফ্যাট কমবে, শরীর ফিট হবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
বিগিনারদের জন্য টিপস (FAQ)
১. আমি ওজন কমাতে চাই। জিমে কোন ব্যায়ামগুলো আগে করবো?
উত্তর:
বিগিনার হিসেবে শুরু করুন হালকা কার্ডিও দিয়ে, যেমন ট্রেডমিলে হাঁটা বা বাইক চালানো। এরপর বডিওয়েট এক্সারসাইজ (স্কোয়াট, প্ল্যাঙ্ক) ও সহজ স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করতে পারেন। ধীরে ধীরে স্ট্রেন্থ ও ইনটেনসিটি বাড়ান।
২. প্রতিদিন জিমে যাওয়া কি দরকার?
উত্তর:
না, প্রতিদিন না গেলেও হবে। সপ্তাহে ৪–৫ দিন নিয়মিত ওয়ার্কআউট করাই যথেষ্ট। মাঝে মাঝে বিশ্রামও দরকার হয়, শরীর পুনরুদ্ধারের জন্য।
৩. জিমে যাওয়ার আগে খালি পেটে যাওয়া কি ঠিক?
উত্তর:
খালি পেটে ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো। হালকা কিছু খেয়ে নিন যেমন একটি কলা বা ওটস। এতে শক্তি পাবেন এবং পারফরম্যান্স ভালো হবে।
৪. জিমে কতক্ষণ ব্যায়াম করলে ভালো?
উত্তর:
বিগিনারদের জন্য দিনে ৩০–৬০ মিনিট যথেষ্ট। শুরুতে ৩০ মিনিট দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো যেতে পারে।
৫. কার্ডিও আগে করবো, না স্ট্রেন্থ ট্রেনিং?
উত্তর:
আপনার লক্ষ্য যদি ওজন কমানো হয়, তাহলে স্ট্রেন্থ ট্রেনিং আগে করে তারপর কার্ডিও করা ভালো। এতে বেশি ফ্যাট বার্ন হয়।
৬. জিমে কোন মেশিনগুলো ফ্যাট বার্নে কার্যকর?
উত্তর:
-
ট্রেডমিল
-
স্টেশনারি বাইক
-
এলিপটিকাল ট্রেইনার
-
রো잇িং মেশিন
এগুলো নিয়মিত ব্যবহারে ফ্যাট বার্ন হয় ও কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস বাড়ে।
৭. আমি ওজন বেশি, কিভাবে জিম শুরু করবো?
উত্তর:
ধীরে ধীরে শুরু করুন। ওজন বেশি হলে জয়েন্টে চাপ পড়ে, তাই প্রথমে হালকা মেশিন-ভিত্তিক কার্ডিও, বডিওয়েট এক্সারসাইজ ও স্ট্রেচিং করুন। চাইলে একজন ট্রেইনারের সাহায্য নিতে পারেন।
৮. জিমে কী পোশাক পরা উচিত?
উত্তর:
সুবিধাজনক ও ঘাম শোষণ করে এমন হালকা পোশাক পরুন। ভাল ফিটিং জুতা পরুন যাতে জয়েন্টে চাপ কম পড়ে।
৯. জিমে যাওয়ার কতদিন পর ওজন কমা শুরু হবে?
উত্তর:
প্রথম ১–২ সপ্তাহে বড় পরিবর্তন না-ও দেখা যেতে পারে। কিন্তু ৩–৪ সপ্তাহ পর থেকে ক্যালোরি ঘাটতি ও ব্যায়ামের ফলে ধীরে ধীরে ওজন কমতে শুরু করে।
১০. জিমে ওজন না কমে বরং বাড়ছে কেন?
উত্তর:
এটি খুব সাধারণ ঘটনা। প্রথমদিকে পেশি তৈরি হতে শুরু করলে ওজন বাড়লেও ফ্যাট কমতে থাকে। আয়নায় বা পরিমাপে পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তাই স্কেল নয়, শরীরের গঠন ও ফিটিং দেখে অগ্রগতি মূল্যায়ন করুন।
No comment yet, add your voice below!