Skip to content

ভার্টিগো: কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

ভার্টিগো হল এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তি নিজেকে বা তার চারপাশের পরিবেশকে ঘোরার অনুভূতি অনুভব করে। এটি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সাধারণত ভারসাম্য সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। ভার্টিগো সাধারণত অভ্যন্তরীণ কানের সমস্যার কারণে ঘটে এবং এটি বিভিন্ন কারণের ফলেও হতে পারে।

ভার্টিগো কী?

ভার্টিগো হল একটি বিশেষ ধরনের মাথা ঘোরা, যা সাধারণ মাথা ঘোরা থেকে আলাদা। এই সমস্যায় ব্যক্তি নিজেকে বা তার আশেপাশের সবকিছু ঘোরাতে দেখে এবং এই অনুভূতি অত্যন্ত অস্বস্তিকর ও অস্বাভাবিক হতে পারে। ভার্টিগো কোনো রোগ নয়, এটি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।

ভার্টিগোর কারণ

ভার্টিগোর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, তবে সাধারণত এটি অভ্যন্তরীণ কানের সমস্যা থেকে সৃষ্টি হয়। নিচে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হল:

  1. বেনাইন প্যারক্সিসমাল পজিশনাল ভার্টিগো (BPPV):
    • BPPV হল সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ভার্টিগো, যা সাধারণত মাথার অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে ঘটে। এটি অভ্যন্তরীণ কানের ক্যালসিয়াম কণার স্থানান্তরের কারণে ঘটে।
  2. মেনিয়ার ডিজিজ:
    • এই অবস্থায় অভ্যন্তরীণ কানে তরল জমা হয়, যা ভার্টিগো, শুনতে সমস্যা এবং কান বাজানোর (টিনিটাস) কারণ হতে পারে।
  3. ভেসটিবুলার নিউরোনাইটিস বা ল্যাবরিন্থাইটিস:
    • এটি একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা অভ্যন্তরীণ কানের স্নায়ুকে প্রভাবিত করে এবং ভার্টিগো সৃষ্টি করে।
  4. মাইগ্রেন:
    • মাইগ্রেনের ফলে অনেক সময় ভার্টিগো হতে পারে। মাইগ্রেনজনিত ভার্টিগো সাধারণত মাথা ব্যথার সাথে যুক্ত থাকে।
  5. কানের সংক্রমণ:
    • কানের সংক্রমণ বা ইয়ার ইনফেকশন ভার্টিগোর কারণ হতে পারে।
  6. মাথায় আঘাত:
    • মাথায় আঘাতের ফলে অভ্যন্তরীণ কানের ক্ষতি হতে পারে, যা ভার্টিগো সৃষ্টি করতে পারে।

ভার্টিগোর লক্ষণ

ভার্টিগোর প্রধান লক্ষণ হল মাথা ঘোরা এবং ঘূর্ণায়মান অনুভূতি। তবে আরও কিছু লক্ষণ থাকতে পারে:

  • বমি বমি ভাব বা বমি করা
  • ব্যালান্সের সমস্যা বা ভারসাম্যহীনতা
  • কানে বাজা বা টিনিটাস
  • শুনতে সমস্যা
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • মাথা ব্যথা

চিকিৎসা

ভার্টিগোর চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের উপর। নীচে কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হল:

  1. ওষুধ:
    • ভার্টিগোর কারণে বমি বমি ভাব এবং বমি রোধ করতে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া কানের সংক্রমণ বা মেনিয়ার ডিজিজের জন্য ওষুধও ব্যবহার করা যেতে পারে।
  2. ভেস্টিবুলার রিহ্যাবিলিটেশন:
    • ভেস্টিবুলার রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপি (VRT) একটি বিশেষ ধরনের শারীরিক থেরাপি, যা অভ্যন্তরীণ কানের ভারসাম্যজনিত সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি ভার্টিগোর লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।
  3. ইপ্লি ম্যানুভার:
    • এটি একটি বিশেষ ধরনের শারীরিক ম্যানুভার, যা BPPV এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি ক্যালসিয়াম কণাকে স্থানান্তরিত করতে সাহায্য করে, যাতে মাথা ঘোরা কমে।
  4. মেনিয়ার ডিজিজের চিকিৎসা:
    • মেনিয়ার ডিজিজের চিকিৎসায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, যেমন লবণ কম খাওয়া এবং ডায়ুরেটিক ওষুধ গ্রহণ করতে হয়।
  5. কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT):
    • দীর্ঘমেয়াদি ভার্টিগোর ক্ষেত্রে CBT ব্যবহার করা যেতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ভার্টিগো জনিত উদ্বেগ কমায়।

 

ভার্টিগোর চিকিৎসায় যে ওষুধগুলি ব্যবহার করা হয়, তা নির্ভর করে ভার্টিগোর কারণ এবং লক্ষণগুলির উপর। কিছু সাধারণ ওষুধের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হল:

 

ওষুধের ধরন এবং ব্যবহার:

  1. অ্যান্টিহিস্টামিনস:
    • মেক্লিজিন (Meclizine): এটি সাধারণত বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা কমাতে ব্যবহৃত হয়।
    • ডাইমেনহাইড্রিনেট (Dimenhydrinate): এটি বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা কমাতে সাহায্য করে।
  2. বেঞ্জোডিয়াজেপিনস:
    • ডায়াজেপাম (Diazepam): এটি উদ্বেগ কমাতে এবং ভার্টিগোর লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
    • লোরাজেপাম (Lorazepam): এটি উদ্বেগ এবং ভার্টিগোর লক্ষণ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
  3. অ্যান্টিচোলিনার্জিকস:
    • স্কোপোলামিন (Scopolamine): এটি ট্রান্সডার্মাল প্যাচ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং মাথা ঘোরা কমাতে সাহায্য করে।
  4. অ্যান্টিমেটিকস:
    • প্রোমেথাজিন (Promethazine): এটি বমি বমি ভাব এবং বমি কমাতে সাহায্য করে।
    • মেটোক্লোপ্রামাইড (Metoclopramide): এটি বমি বমি ভাব এবং বমি রোধে ব্যবহৃত হয়।
  5. ডিউরেটিকস:
    • হাইড্রোক্লোরোথিয়াজাইড (Hydrochlorothiazide): এটি মেনিয়ার ডিজিজের ক্ষেত্রে কানের ভিতরের তরল জমা কমাতে সাহায্য করে।
  6. ভেস্টিবুলার সাপ্রেসেন্টস:
    • বেটাহিস্টিন (Betahistine): এটি মেনিয়ার ডিজিজের লক্ষণ কমাতে ব্যবহৃত হয়।

 

ঘরোয়া প্রতিকার

ভার্টিগোর লক্ষণ কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকারও ব্যবহার করা যেতে পারে:

  1. আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন:
    • শুয়ে বিশ্রাম নিন এবং চোখ বন্ধ রাখুন। এটা মাথা ঘোরা কমাতে সাহায্য করবে।
  2. প্রচুর পানি পান করুন:
    • ডিহাইড্রেশন অনেক সময় ভার্টিগোর কারণ হতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  3. ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন:
    • ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল ভার্টিগোর লক্ষণ বাড়াতে পারে, তাই এগুলি এড়িয়ে চলুন।
  4. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
    • ভার্টিগো কমানোর জন্য নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।

ভার্টিগোর জন্য সাধারণত একজন ইএনটি (ইয়ার, নোজ, থ্রোট) বিশেষজ্ঞ বা একজন নিউরোলজিস্টের কাছে যাওয়া উচিত। এদের মধ্যে কাকে বেছে নেবেন তা নির্ভর করে আপনার লক্ষণ এবং সম্ভাব্য কারণের উপর:

  1. ইএনটি (ইয়ার, নোজ, থ্রোট) বিশেষজ্ঞ:
    • যদি আপনার ভার্টিগোর কারণ অভ্যন্তরীণ কানের সমস্যা, যেমন বেনাইন প্যারক্সিসমাল পজিশনাল ভার্টিগো (BPPV), মেনিয়ার ডিজিজ, বা কানের সংক্রমণ, তাহলে একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।
  2. নিউরোলজিস্ট:
    • যদি আপনার ভার্টিগোর কারণ মাথা ঘোরা, মাইগ্রেন, বা স্নায়ুর সমস্যার সাথে সম্পর্কিত হয়, তাহলে একজন নিউরোলজিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।
আপনি প্রথমে আপনার সাধারণ চিকিৎসকের (GP) সাথেও পরামর্শ করতে পারেন। তারা আপনার লক্ষণ দেখে সঠিক বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করতে পারবেন।

ঢাকায় ভার্টিগো বা অন্য কোনো কান, নাক, গলার সমস্যার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আপনি নিচের চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন:

  1. প্রফেসর ডঃ এম এ মাতিন
    চেম্বার: বাংলাদেশ ইএনটি হাসপাতাল লিমিটেড, নবানা নিউবেরি প্লেস, ৪/১/এ, সবাহানবাগ, মিরপুর রোড, ঢাকা।
    সময়: বিকেল ৩টা থেকে ৬টা (বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বন্ধ)।
    অ্যাপয়েন্টমেন্ট: +8809666710710।
  2. প্রফেসর ডঃ মোঃ সাহবুব আলম
    চেম্বার: বাংলাদেশ ইএনটি হাসপাতাল লিমিটেড, নবানা নিউবেরি প্লেস, ৪/১/এ, সবাহানবাগ, মিরপুর রোড, ঢাকা।
    সময়: বিকেল ৩টা থেকে ৫টা (শুক্রবার বন্ধ)।
    অ্যাপয়েন্টমেন্ট: +8801717250667।

 

No comment yet, add your voice below!


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *