ম্যাগনেসিয়াম: শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও উপকারিতা
ম্যাগনেসিয়াম মানব শরীরের জন্য একটি অত্যাবশ্যক খনিজ যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের প্রায় প্রতিটি কোষে পাওয়া যায় এবং ৩০০ টিরও বেশি বায়োকেমিক্যাল বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নিচে ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা ও উপকারিতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা
- এনার্জি উৎপাদন: ম্যাগনেসিয়াম শরীরের শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এটি অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) সক্রিয় করতে সাহায্য করে, যা কোষের প্রধান শক্তির উৎস।
- পেশী ও নার্ভ কার্যক্রম: পেশীর সংকোচন এবং নার্ভের সংকেত প্রেরণে ম্যাগনেসিয়াম অপরিহার্য। এটি পেশীর শিথিলতায় ভূমিকা রাখে এবং ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে।
- ডিএনএ ও প্রোটিন সংশ্লেষণ: ম্যাগনেসিয়াম ডিএনএ এবং প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোষের বৃদ্ধি এবং পুনর্গঠনে সহায়তা করে।
- হাড়ের স্বাস্থ্য: ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিলিত হয়ে হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: ম্যাগনেসিয়াম রক্তনালীর আরাম এবং সঠিক রক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।
- ইনসুলিন সংবেদনশীলতা: ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ম্যাগনেসিয়ামের উপকারিতা
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং হতাশা কমাতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদন বাড়িয়ে মুড ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- ঘুমের মান উন্নয়ন: ম্যাগনেসিয়াম মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: ম্যাগনেসিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি হার্টের রিদম স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- প্রদাহ কমায়: ম্যাগনেসিয়াম প্রদাহ প্রতিরোধ করে এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
- মহিলাদের স্বাস্থ্য: মাসিকের সময় ক্র্যাম্প ও পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে ম্যাগনেসিয়াম কার্যকর।
- ক্রীড়া কার্যক্ষমতা বাড়ানো: ম্যাগনেসিয়াম শরীরের অক্সিজেন ব্যবহার দক্ষতায় সহায়তা করে, যা শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
ম্যাগনেসিয়ামের উৎস
প্রাকৃতিকভাবে ম্যাগনেসিয়ামের উৎসের মধ্যে রয়েছে:
- শাকসবজি (যেমন পালং শাক, ব্রোকলি)
- বাদাম (যেমন কাজু, আমন্ড)
- শস্য (যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস)
- ফল (যেমন কলা, অ্যাভোকাডো)
- মৎসজাতীয় খাবার (যেমন সালমন, ম্যাকারেল)
ম্যাগনেসিয়াম: হৃদযন্ত্রের জন্য অপরিহার্য একটি খনিজ
ম্যাগনেসিয়াম হল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। এটি হৃদযন্ত্রের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিমাণে ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে এবং বিভিন্ন হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
ম্যাগনেসিয়ামের হৃদযন্ত্রে ভূমিকা
- হৃদযন্ত্রের সঠিক কার্যক্রমে সহায়তা
ম্যাগনেসিয়াম পেশির সংকোচন এবং শিথিলতায় সাহায্য করে। এটি হৃদপিণ্ডের পেশিগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করে, যার ফলে হৃদস্পন্দন নিয়মিত থাকে। - রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ম্যাগনেসিয়াম রক্তনালীগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত রক্তচাপ বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত কার্যকর। - ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা
ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা হৃদযন্ত্রের সঠিক কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। - হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস
গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ধমনীতে প্রদাহ কমায় এবং রক্তনালীর ব্লকেজ প্রতিরোধে সাহায্য করে। - অ্যারিথমিয়া প্রতিরোধে ভূমিকা
ম্যাগনেসিয়াম হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত স্পন্দন (অ্যারিথমিয়া) প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি হৃদস্পন্দনের ছন্দ বজায় রাখতে কার্যকর।
ম্যাগনেসিয়ামের উৎস
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্যগুলো হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উৎস উল্লেখ করা হলো:
- শাকসবজি: পালং শাক, মেথি শাক
- বাদাম: কাজু, আমন্ড, চিনাবাদাম
- শস্য: ওটস, ব্রাউন রাইস
- ফল: কলা, অ্যাভোকাডো
- মাছ: স্যামন, ম্যাকারেল
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবের লক্ষণ
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হৃদযন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর কয়েকটি লক্ষণ হলো:
- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
- পেশির খিঁচুনি
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
- উচ্চ রক্তচাপ
ম্যাগনেসিয়াম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ম্যাগনেসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর কারণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে
ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি শরীরের কোষগুলোকে ইনসুলিন গ্রহণে সহায়তা করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
২. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
ম্যাগনেসিয়াম গ্লুকোজ বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে, যা ডায়াবেটিসের জটিলতা কমাতে পারে।
৩. ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত জটিলতা হ্রাস করে
ডায়াবেটিসের কারণে সৃষ্ট জটিলতা, যেমন স্নায়ুর ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি) বা রক্তচাপ বৃদ্ধি প্রতিরোধে ম্যাগনেসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ কমায়
ম্যাগনেসিয়াম প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। প্রদাহ হ্রাসের মাধ্যমে এটি ডায়াবেটিসের অন্যান্য সমস্যাগুলোর ঝুঁকি কমাতে পারে।
৫. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যেমন:
- শাকসবজি (পালং শাক, কলমি শাক)
- বাদাম (আমন্ড, কাজু)
- বীজ (সানফ্লাওয়ার সিড, চিয়া সিড)
- মাছ (সালমন, ম্যাকারেল)
- গোটা শস্য (ওটস, ব্রাউন রাইস)
ত্বক,চিল ও হাড়ের জন্য ম্যাগনেসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা:
ম্যাগনেসিয়াম মানবদেহের একটি অপরিহার্য খনিজ, যা ত্বক, চুল এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেহের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে সৌন্দর্য এবং হাড়ের মজবুত গঠনের ক্ষেত্রে।
ত্বকের জন্য ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা
- ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা
ম্যাগনেসিয়াম ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধ করে। এটি ত্বকের কোষে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়। - ব্রণ ও প্রদাহ কমানো
ম্যাগনেসিয়াম প্রদাহ বিরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে, যা ব্রণ বা একজিমার মতো ত্বকের সমস্যাগুলো হ্রাস করে। - বার্ধক্যের প্রভাব প্রতিরোধ
এটি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বককে টানটান ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করে। ফলে বলিরেখা ও বার্ধক্যের লক্ষণ কমে আসে।
চুলের জন্য ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা
- চুলের গোঁড়ার পুষ্টি যোগানো
ম্যাগনেসিয়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোঁড়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছে দেয়, যা চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। - চুল পড়া রোধ
এটি ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং চুলের ফলিকল বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে, যা চুল পড়া কমায়। - চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
ম্যাগনেসিয়াম চুলের কাঠামো মজবুত করে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
হাড়ের জন্য ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা
- হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি
ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, যা হাড়কে শক্তিশালী এবং মজবুত করে। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে কার্যকর। - অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ
নিয়মিত ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের ক্ষয়) প্রতিরোধ করে এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি হ্রাস করে। - শিশুদের হাড়ের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা
বাচ্চাদের হাড়ের গঠন ও বিকাশে ম্যাগনেসিয়াম অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:
ম্যাগনেসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা আমাদের শরীরের ৩০০টিরও বেশি বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এটি পেশি ও স্নায়ুর কার্যক্রম, হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য এবং হাড়ের গঠন মজবুত করতে অত্যন্ত কার্যকর। দৈনন্দিন জীবনে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে শরীরের সঠিক কার্যকারিতা বজায় থাকে।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা
১. শাকসবজি
- পালং শাক: ম্যাগনেসিয়ামের অন্যতম প্রধান উৎস।
- কলমি শাক: সহজলভ্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।
- ব্রকোলি: হাড়ের গঠন মজবুত করার পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে।
২. বাদাম ও বীজ
- আমন্ড: উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে।
- কাজু: পেশি ও স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে।
- চিয়া সিড ও ফ্ল্যাক্স সিড: চুল, ত্বক এবং হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী।
৩. শস্যজাতীয় খাবার
- গোটা শস্য: যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস এবং কুইনোয়া।
- গমের ভূষি: প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে।
৪. মাছ ও সামুদ্রিক খাবার
- সালমন: ম্যাগনেসিয়ামসহ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ।
- ম্যাকারেল: হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর।
৫. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
- দুধ ও দই: ম্যাগনেসিয়ামের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের উৎস।
- চিজ: বিশেষত হার্ড চিজ ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে।
৬. ফল ও শুকনো ফল
- কলা: সহজলভ্য এবং ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস।
- অ্যাভোকাডো: উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়ামসহ ভালো ফ্যাট সরবরাহ করে।
- খেজুর ও কিশমিশ: শুকনো ফলে ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য।
৭. ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এটি স্বাস্থ্যকর উপাদান হিসেবে স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবের লক্ষণ
যদি খাদ্যতালিকায় ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকে, তবে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:
- পেশি খিঁচুনি
- ক্লান্তি
- হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
- মানসিক অস্থিরতা
উপসংহার
ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পেশি, স্নায়ু, হৃদপিণ্ড, হাড় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরি, যাতে আপনি সুস্থ ও শক্তিশালী থাকতে পারেন। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন, তাই এর পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।
…………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………………………..
ম্যাগনেসিয়াম নিয়ে Frequently Asked Questions (FAQ)
- ম্যাগনেসিয়াম কী?
ম্যাগনেসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা শরীরের ৩০০টিরও বেশি জীববৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এটি পেশি, স্নায়ু, হৃদপিণ্ড, হাড় এবং শারীরিক শক্তির জন্য অপরিহার্য। - ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জন্য কেন প্রয়োজন?
ম্যাগনেসিয়াম শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপে সহায়তা করে, যেমন:
- পেশি ও স্নায়ুর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ
- হৃদরোগ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
- হাড়ের গঠন শক্তিশালী করা
- স্ট্রেস কমানো এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
- ম্যাগনেসিয়ামের অভাবের লক্ষণ কী কী?
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে নিম্নলিখিত সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- পেশিতে খিঁচুনি বা টান
- ক্লান্তি এবং শারীরিক দুর্বলতা
- উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ
- অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা হৃদরোগ
- হাড় দুর্বলতা
- কতটা ম্যাগনেসিয়াম প্রতিদিন গ্রহণ করা উচিত?
বয়স এবং লিঙ্গ অনুযায়ী দৈনিক ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদা ভিন্ন হতে পারে:
- পুরুষ: ৪০০-৪২০ মিলিগ্রাম
- মহিলা: ৩১০-৩২০ মিলিগ্রাম
- গর্ভবতী নারী: ৩৫০-৪০০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম কোথায় পাওয়া যায়?
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ কিছু খাবারের মধ্যে রয়েছে:
- বাদাম (যেমন আমন্ড, কাজু)
- শাকসবজি (যেমন পালং শাক, কলমি শাক)
- গোটা শস্য (যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস)
- মাছ (যেমন সালমন, ম্যাকারেল)
- শুকনো ফল (যেমন খেজুর, কিশমিশ)
- ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নেওয়া নিরাপদ?
ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট সাধারণত নিরাপদ, তবে সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা জরুরি। অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করলে পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া বা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। - ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের পরিবর্তে সাপ্লিমেন্ট নিতে পারি?
যদি খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম না পাওয়া যায়, তবে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। তবে, সবচেয়ে ভালো উপায় হল প্রাকৃতিক খাবার থেকে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া, কারণ এতে অন্যান্য পুষ্টিগুণও থাকে। - ম্যাগনেসিয়ামের অতিরিক্ত গ্রহণ কি ক্ষতিকর?
হ্যাঁ, অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া, কিডনির সমস্যা এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। - ম্যাগনেসিয়াম কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী?
হ্যাঁ, ম্যাগনেসিয়াম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। - ম্যাগনেসিয়াম কি ঘুমাতে সাহায্য করে?
ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু শান্ত রাখতে এবং শরীরের পরিশ্রান্তি কমাতে সহায়ক, যা ঘুমের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন বাড়িয়ে ঘুমানোর প্রক্রিয়া উন্নত করে। - ম্যাগনেসিয়ামের অভাব কি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়?
হ্যাঁ, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, কারণ এটি হৃদয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। - ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট কীভাবে গ্রহণ করা উচিত?
ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট সাধারণত খাবারের সঙ্গে অথবা খাবারের পর গ্রহণ করা উচিত। কিছু সাপ্লিমেন্ট রাতে ঘুমানোর আগে নেওয়া ভালো হতে পারে, কারণ এটি ঘুমে সহায়ক।
1 Comment
apnader site bhalo laga