Skip to content

হাই ব্লাড প্রেসার: সতর্কতা ও প্রতিরোধের উপায়

হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। এটি এমন একটি রোগ যা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যার মতো মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, হাই ব্লাড প্রেসার পৃথিবীর অন্যতম সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এ লেখায় আমরা হাই ব্লাড প্রেসারের কারণ, লক্ষণ, এবং প্রতিরোধের উপায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

 

হাই ব্লাড প্রেসার কী?

হাই ব্লাড প্রেসার, যাকে হাইপারটেনশনও বলা হয়, হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে ধমনীতে রক্তের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। সাধারণত রক্তচাপ দুটি সংখ্যায় পরিমাপ করা হয়:

  • সিস্টোলিক প্রেসার: যখন হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করে।
  • ডায়াস্টোলিক প্রেসার: যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকে।

স্বাভাবিক রক্তচাপ সাধারণত ১২০/৮০ মিমি এইচজি। যদি এটি ১৩০/৮০ বা তার বেশি হয়, তবে তা হাই ব্লাড প্রেসার হিসেবে ধরা হয়।

 

হাই ব্লাড প্রেসারের কারণ

হাই ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ), যা হাইপারটেনশন নামেও পরিচিত, তখন ঘটে যখন রক্তের চাপ ধমনী দেওয়ালে দীর্ঘ সময় ধরে বৃদ্ধি পায়। এটি এক ধরণের নীরব ঘাতক রোগ, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে এর বিশেষ লক্ষণ দেখা যায় না। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। নীচে হাই ব্লাড প্রেসারের কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:

১. জীবনযাত্রার কারণসমূহ:
  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ, এবং পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাব।
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা: শরীরের অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।
  • শারীরিক কার্যকলাপের অভাব: নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল: ধূমপানের নিকোটিন এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে।
  • মানসিক চাপ: দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়ায়।
২. স্বাস্থ্যগত কারণসমূহ:
  • জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব: যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকে, তাহলে ঝুঁকি বেশি।
  • বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালী কঠিন হয়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়ায়।
  • ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
  • কিডনি সমস্যা: কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
  • হরমোনাল সমস্যা: থাইরয়েড বা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
৩. অন্যান্য কারণসমূহ:
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ (যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, ডি-কঞ্জেস্টেন্ট) রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
  • অপর্যাপ্ত ঘুম: ঘুমের সমস্যা (যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া) উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
  • পরিবেশগত কারণ: দূষণ এবং অন্যান্য পরিবেশগত চাপও প্রভাব ফেলে।

 

হাই ব্লাড প্রেসারের লক্ষণ

হাই ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ) অনেক সময় “নীরব ঘাতক” বলা হয় কারণ এটি প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষ কোনো লক্ষণ সৃষ্টি নাও করতে পারে। তবে, উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলিত থাকলে এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। নীচে হাই ব্লাড প্রেসারের লক্ষণগুলি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

১. সাধারণ লক্ষণসমূহ:
  • মাথাব্যথা: হঠাৎ বা ঘন ঘন মাথাব্যথা, বিশেষত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর।
  • বমি বমি ভাব বা বমি: অতিরিক্ত রক্তচাপ মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের সমস্যার কারণ হতে পারে, যা বমি বা বমি বমি ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
  • চোখে ঝাপসা দেখা: রেটিনাতে রক্তনালীগুলোর ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দৃষ্টিশক্তি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ঘাম হওয়া: অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এবং শরীর অস্বাভাবিক ঠান্ডা অনুভূত হওয়া।
  • নাক দিয়ে রক্তপাত: যদিও এটি খুব কমই ঘটে, তবে অস্বাভাবিক রক্তচাপ নাক দিয়ে রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
২. গুরুতর লক্ষণসমূহ (জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন):
  • বুকের ব্যথা: হৃদযন্ত্রে চাপ পড়লে বুকের ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা কখনো কখনো হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।
  • হৃদস্পন্দনের অনিয়ম: হঠাৎ হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত হওয়া।
  • অবসন্নতা বা ক্লান্তি: রক্তচাপ অত্যধিক বাড়লে শরীরে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যা দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
  • শ্বাসকষ্ট: রক্তচাপ বেড়ে গেলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • অজ্ঞান হওয়া: রক্তপ্রবাহে গুরুতর সমস্যা হলে এটি ঘটতে পারে।
৩. দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের লক্ষণ:
  • কিডনির সমস্যা: প্রস্রাবে পরিবর্তন (যেমন প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া)।
  • হৃদযন্ত্রের অসুস্থতা: হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে যাওয়ার লক্ষণ, যেমন সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া।
  • স্ট্রোকের লক্ষণ: মুখের একপাশ ঝুলে পড়া, কথা বলার সমস্যা, বা শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া।
  • পায়ে ফোলাভাব: অতিরিক্ত রক্তচাপ হৃদপিণ্ডের কাজ ব্যাহত করলে এটি পায়ে তরল জমা হতে পারে।
কেন লক্ষণগুলো উপেক্ষা করা উচিত নয়?

হাই ব্লাড প্রেসারের কারণে ধমনীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলিওর এবং অন্যান্য গুরুতর সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

 

হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সতর্কতা

হাই ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ) নিয়ন্ত্রণে সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা, এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে তা নীচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন
  • কম লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন: দিনে ৫ গ্রামের কম লবণ খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায়।
  • সবজি ও ফলমূল খান: তাজা শাকসবজি, ফলমূল, এবং উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • পটাসিয়ামযুক্ত খাবার খান: কলা, আলু, এবং পালংশাকে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • ফ্যাট ও চর্বি কমান: স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার (যেমন ভাজা খাবার) এড়িয়ে চলুন এবং ভালো চর্বি (যেমন অলিভ অয়েল, বাদাম) ব্যবহার করুন।
  • ক্যাফেইন নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত কফি বা চা পান করা থেকে বিরত থাকুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • অন্তত ৩০ মিনিটের ব্যায়াম করুন: হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, সাঁতার বা সাইক্লিং, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
  • শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করুন: যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন মানসিক চাপ কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • নিয়মিত রুটিন তৈরি করুন: প্রতিদিন একই সময়ে ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাই:
    • সুষম খাদ্য গ্রহণ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
    • শরীরের BMI (Body Mass Index) ১৮.৫-২৪.৯ মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন।
৪. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন
  • ধূমপান বন্ধ করুন: নিকোটিন রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়।
  • অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। দিনে পুরুষদের জন্য দুই গ্লাস এবং মহিলাদের জন্য এক গ্লাসের বেশি সেবন করা উচিত নয়।
৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
  • মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করুন: মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
  • রিলাক্সেশনের সময় নিন: নিজের জন্য সময় বের করুন এবং প্রিয় কাজগুলো করুন।
৬. নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন
  • ঘরে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র ব্যবহার করুন: নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন এবং রেকর্ড রাখুন।
  • ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন: রক্তচাপের মাত্রা বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭. ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করুন
  • ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন: নির্ধারিত ওষুধ ঠিক সময়ে এবং সঠিক ডোজে গ্রহণ করুন।
  • ওষুধ বন্ধ করবেন না: কোনো লক্ষণ না থাকলেও ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়, কারণ এটি হঠাৎ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
৮. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
  • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে।
৯. পরিবেশগত সতর্কতা
  • দূষণ এড়িয়ে চলুন: ধূলাবালি ও বায়ু দূষণ হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • শান্ত পরিবেশে থাকুন: অতিরিক্ত শব্দ ও মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।

 

হাই ব্লাড প্রেসার প্রতিরোধের উপায়

হাই ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ) প্রতিরোধ করা সম্ভব সঠিক জীবনধারা অনুসরণ এবং কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে। এটি প্রতিরোধ করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যার মতো জটিল রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। নীচে হাই ব্লাড প্রেসার প্রতিরোধের উপায়সমূহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
  • কম লবণযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন: দিনে ৫ গ্রামের কম লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ানোর প্রধান কারণ।
  • সবজি ও ফলমূল খান: পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং আঁশসমৃদ্ধ সবজি ও ফলমূল, যেমন কলা, কমলা, পালং শাক এবং ব্রকলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • কম ফ্যাটযুক্ত খাবার খান: অতিরিক্ত চর্বি ও তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ফ্যাটের স্বাস্থ্যকর উৎস হিসেবে অলিভ অয়েল, বাদাম, এবং অ্যাভোকাডো ব্যবহার করুন।
  • প্রসেসড ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন: এ ধরনের খাবারে লবণ এবং চর্বি বেশি থাকে যা রক্তচাপ বাড়ায়।
২. নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করুন
  • নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং বা যোগব্যায়াম করুন।
  • সক্রিয় জীবনযাপন করুন: অলস সময় কাটানো কমিয়ে বেশি সময় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: ওজন বেশি হলে তা কমানোর জন্য চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ বাড়ায়।
  • BMI (Body Mass Index) বজায় রাখুন: BMI ১৮.৫-২৪.৯ এর মধ্যে থাকা উচিত।
৪. মানসিক চাপ কমান
  • মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম: প্রতিদিন কিছু সময় মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করুন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমের ঘাটতি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং রক্তচাপ বাড়ায়।
  • মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখুন: মানসিক চাপ এড়ানোর জন্য প্রিয় কাজ করুন, বই পড়ুন, বা বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।
৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন
  • ধূমপান বন্ধ করুন: ধূমপানের নিকোটিন ধমনী সংকুচিত করে, যা রক্তচাপ বাড়ায়।
  • অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ করুন: দিনে ১-২ গ্লাসের বেশি অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকুন।
৬. নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন
  • সতর্ক থাকুন: নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন, বিশেষত যদি আপনার বংশগতভাবে হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি থাকে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যেকোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
  • প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।
৮. বংশগত ঝুঁকির প্রতি সচেতন থাকুন
  • পরিবারের ইতিহাস জানুন: যদি আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হাই ব্লাড প্রেসার থাকে, তবে আরও সতর্ক থাকুন।
  • আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন: স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করুন।
৯. সঠিক পরিবেশ ও জীবনযাত্রা বজায় রাখুন
  • দূষণ এড়িয়ে চলুন: ধূলাবালি ও বায়ু দূষণ এড়িয়ে চলুন।
  • পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখুন।

হাই ব্লাড প্রেসার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এটি প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে আপনি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

এছাড়া, হাই ব্লাড প্রেসার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের এবং পরিবারের সুস্থতার জন্য এই রোগের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে। সুস্থ থাকুন, সাবধানে থাকুন।

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

 

হাই ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ) সম্পর্কিত সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্ন ১: হাই ব্লাড প্রেসার কী?

উত্তর:
হাই ব্লাড প্রেসার, বা হাইপারটেনশন, এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্ত ধমনী দেওয়ালে দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং কিডনি সমস্যার মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রশ্ন ২: রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা কত হওয়া উচিত?

উত্তর:
স্বাভাবিক রক্তচাপ সাধারণত ১২০/৮০ mmHg (মিলিমিটার পার কুইক) হয়।

  • সিস্টোলিক (উপরের সংখ্যা): ১২০ এর নিচে হওয়া উচিত।
  • ডায়াস্টোলিক (নিচের সংখ্যা): ৮০ এর নিচে হওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৩: হাই ব্লাড প্রেসারের কারণ কী?

উত্তর:
হাই ব্লাড প্রেসারের কারণ হতে পারে:

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (লবণ ও ফ্যাট বেশি খাওয়া)।
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন।
  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।
  • মানসিক চাপ।
  • বংশগত কারণ।
  • কিডনি বা হরমোনজনিত সমস্যা।
প্রশ্ন ৪: হাই ব্লাড প্রেসারের লক্ষণ কী কী?

উত্তর:
অনেক সময় এটি লক্ষণহীন থাকে, তবে গুরুতর অবস্থায় দেখা দিতে পারে:

  • মাথাব্যথা।
  • বমি বমি ভাব।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • নাক দিয়ে রক্তপাত।
  • শ্বাসকষ্ট।
  • বুকের ব্যথা।
প্রশ্ন ৫: হাই ব্লাড প্রেসার কীভাবে নির্ণয় করা হয়?

উত্তর:
হাই ব্লাড প্রেসার একটি বিশেষ যন্ত্র দিয়ে (স্ফিগমোম্যানোমিটার) রক্তচাপ পরিমাপের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। এটি সঠিকভাবে পরিমাপ করার জন্য:

  • আরামদায়ক অবস্থায় বসুন।
  • পরিমাপের আগে ধূমপান বা ক্যাফেইন গ্রহণ করবেন না।
প্রশ্ন ৬: হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের খাবার উপকারী?

উত্তর:

  • তাজা ফল ও সবজি (যেমন কলা, কমলা, পালং শাক)।
  • কম লবণযুক্ত খাবার।
  • আঁশযুক্ত খাবার (যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস)।
  • ভালো ফ্যাট (যেমন বাদাম, অলিভ অয়েল)।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
প্রশ্ন ৭: হাই ব্লাড প্রেসার কি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য?

উত্তর:
হাই ব্লাড প্রেসার পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য না হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক জীবনযাপন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

প্রশ্ন ৮: হাই ব্লাড প্রেসার থেকে কী কী জটিলতা হতে পারে?

উত্তর:

  • হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক।
  • স্ট্রোক।
  • কিডনি সমস্যা।
  • চোখের সমস্যা বা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস।
  • ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
প্রশ্ন ৯: নিয়মিত রক্তচাপ মাপা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর:
নিয়মিত রক্তচাপ মাপা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ না থাকলেও এটি আপনার স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। নিয়মিত পরিমাপ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন ১০: কোন বয়সে হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি বেশি?

উত্তর:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। তবে, জীবনধারার কারণে তরুণদের মধ্যেও এটি হতে পারে।

No comment yet, add your voice below!


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *