Skip to content

“হার্টঅ্যাটাকের কারণ এবং প্রতিকার: সবার জানা উচিত”

ভুমিকা:

হার্টঅ্যাটাক (যা আমার প্রমিত ভাষায় “মায়োকর্ডিয়াল ইনফার্কশন” হিসেবে পরিচিত) হল এক ধরনের পরিস্থিতি যেখানে হার্টের পেশীকে রক্ত সরবরাহ করার ধমনী (করোনারি আর্টারি) কোনো কারণে ব্লক হয়ে যায়, যার ফলে হার্টের পেশী পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং সেই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি একটি অত্যন্ত জরুরি মেডিকেল অবস্থার মধ্যে পড়ে, যা দ্রুত চিকিৎসা না হলে প্রাণঘাতী হতে পারে।

 

হার্টঅ্যাটাকের প্রধান কারণসমূহ:

  1. আর্থের ব্লক বা চর্বির সঞ্চয়: হার্টের ধমনীর ভিতর কোলেস্টেরল এবং চর্বি জমে গিয়ে প্লাক তৈরি হতে পারে। এই প্লাক যদি ভেঙে যায়, তাহলে রক্ত জমাট বাঁধে এবং আর্টারি ব্লক হয়ে যায়, যা হার্টঅ্যাটাকের মূল কারণ। এটি সাধারণত এথেরোস্ক্লেরোসিস নামে পরিচিত।
  2. উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension): উচ্চ রক্তচাপ (উচ্চ প্রেসার) দীর্ঘ সময় ধরে রক্তনালীতে চাপ সৃষ্টি করে এবং এটি ধমনীর দেয়ালের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে ধমনী ব্লক বা সংকীর্ণ হয়ে যেতে পারে। এটি হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  3. সিগারেট খাওয়া (Smoking): সিগারেটের ধূমপান রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তের শর্করা স্তর এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এটি হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং হার্টঅ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
  4. ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, যা ধমনীতে প্লাক জমাতে সাহায্য করে এবং সুতরাং হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়।
  5. খারাপ খাদ্যাভ্যাস (Poor Diet): অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, সোডিয়াম, ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এই ধরনের খাবার শরীরে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য বিপজ্জনক উপাদান বাড়াতে সাহায্য করে, যা হার্টের ধমনীর ভিতরে জমে যেতে পারে।
  6. অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়া (Obesity): অতিরিক্ত ওজন হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে, রক্তচাপ বাড়ায় এবং শরীরে অনিয়ন্ত্রিত শর্করা স্তরের সৃষ্টি করতে পারে, যা হৃদরোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
  7. পারিবারিক ইতিহাস (Family History): যদি আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ হার্টঅ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনারও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পারিবারিক ইতিহাস হৃদরোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ফ্যাক্টর।
  8. মনের চাপ বা মানসিক চাপ (Stress): অতিরিক্ত মানসিক চাপ হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং হার্টের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, যা হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  9. বয়স এবং লিঙ্গ: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পুরুষদের মধ্যে সাধারণত ৪৫ বছর বয়সের পর এবং মহিলাদের মধ্যে ৫৫ বছর বয়সের পর হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  10. দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা ইনফেকশন: কিছু রোগ যেমন কিডনি সমস্যা, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (যেমন আর্থ্রাইটিস), এবং কিছু ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

 

হার্টঅ্যাটাকের ৭ টি অজানা কারন:

হার্টঅ্যাটাক সাধারণত হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে ব্লকেজ বা বাধার কারণে ঘটে, কিন্তু কিছু অজানা কারণও থাকতে পারে যা হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেক সময় এগুলি মানুষের অজ্ঞতার কারণে চিহ্নিত করা হয় না, কিন্তু এগুলির প্রতি সচেতনতা বাড়ালে হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এখানে হার্টঅ্যাটাকের ৭টি অজানা কারণের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ (Chronic Stress)

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট রেট বাড়ায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হৃদয়ের কার্যকারিতা কমাতে পারে এবং ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, যা হার্টঅ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

২. শরীরের অবসন্নতা (Chronic Inflammation)

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (inflammation) শরীরে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে, যার মধ্যে হৃদরোগ অন্যতম। যখন শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি পায়, এটি রক্তনালীতে প্লাক বা চর্বির জমাট তৈরি করে, যা ধমনীর ব্লকেজ সৃষ্টি করতে পারে। এথেরোস্ক্লেরোসিস (এটি একটি ধমনী সংকোচনের অবস্থা) দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের কারণে ত্বরান্বিত হতে পারে, যা পরবর্তীতে হার্টঅ্যাটাকের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

৩. ঘুমের সমস্যা (Sleep Disorders)

পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়া বা ঘুমের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্লিপ অ্যাপনিয়া, যেখানে ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে। এর ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এটি হার্টঅ্যাটাকের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, বিশেষত যদি স্লিপ অ্যাপনিয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না করা হয়।

৪. খারাপ দন্তের স্বাস্থ্য (Poor Oral Health)

গবেষণায় দেখা গেছে যে, খারাপ দন্ত স্বাস্থ্য এবং গাম ডিজিজ (gingivitis) হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। মুখের জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া রক্তনালীর মধ্যে প্রবেশ করে হৃদয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি কিছুটা কমানো সম্ভব হতে পারে।

৫. অতিরিক্ত টানা বসে থাকা (Sedentary Lifestyle)

শারীরিক কার্যকলাপের অভাব, বা অতিরিক্ত সময় বসে থাকার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকেন বা কম হাঁটাহাঁটি করেন, তাঁদের মধ্যে হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি। বসে থাকার কারণে শরীরের রক্তসঞ্চালন কমে যায়, এবং এটি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং অগ্নিপ্রসূত চর্বির সঞ্চয়ের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যা হার্টঅ্যাটাকের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

৬. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (Hormonal Imbalance)

বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মেনোপজের পর মহিলাদের শরীরে এস্ট্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ কমে যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে যাওয়া বা অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হার্টের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, এবং হার্টঅ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।

৭. এনার্জি ড্রিঙ্কস এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন (Energy Drinks & Excessive Caffeine)

অত্যধিক ক্যাফেইন বা এনার্জি ড্রিঙ্কসের গ্রহণ হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলো দ্রুত হার্টের রেট বাড়িয়ে দিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে। এনার্জি ড্রিঙ্কসের মধ্যে সাধারণত ক্যাফেইন, সুগার, এবং অন্যান্য উত্তেজক উপাদান থাকে, যা হৃদপিণ্ডের ক্রিয়াকলাপকে অস্বাভাবিক করে তুলতে পারে এবং হার্টঅ্যাটাকের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

 

হার্ট সুস্থ্য রাখতে যেসব খাবার ও কাজ করতে হবে:

হার্ট সুস্থ্য রাখা আমাদের দীর্ঘায়ু এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আমাদের হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। এখানে কিছু খাবার এবং কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো যা আপনার হৃদপিণ্ডের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে:

১. হৃদয়ের জন্য উপকারী খাবার

হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে হলে, বিশেষ কিছু খাবার আমাদের খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

১.১ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
  • খাবার: মাছে, বিশেষ করে স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন, হেরিং, এবং ট্রাউট ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস। এছাড়া, আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিডও ভালো উৎস।
  • কার্যকারিতা: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের জন্য উপকারী কারণ এটি রক্তের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, রক্তনালীকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
১.২ ফল এবং সবজি
  • খাবার: পালং শাক, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, আপেল, কলা, বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি), পেয়ার ইত্যাদি।
  • কার্যকারিতা: ফল এবং সবজি ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পানি সরবরাহ করে যা হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক এবং রক্তনালীগুলির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
১.৩ সম্পূর্ণ শস্য (Whole Grains)
  • খাবার: ব্রাউন রাইস, ওটমিল, কুইনোয়া, হোল-উইট পাস্তা, বার্লি, শস্যদানা।
  • কার্যকারিতা: সম্পূর্ণ শস্য ফাইবারের ভালো উৎস এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এছাড়া এগুলো রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
১.৪ বাদাম ও শস্য
  • খাবার: আখরোট, বাদাম, পেস্তা, কাঠবাদাম, কাজু, সানফ্লাওয়ার সিড।
  • কার্যকারিতা: বাদাম ও শস্যে স্বাস্থ্যকর চর্বি (মনো-অ্যাসেটুরেটেড ফ্যাট) থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তনালীগুলি স্বাভাবিক রাখে। এগুলো কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে।
১.৫ এন্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার
  • খাবার: বেরি, সবুজ চা, টমেটো, সীফুড, অঙ্গুর, মিষ্টি আলু।
  • কার্যকারিতা: এসব খাবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। টমেটোতে থাকা লাইকোপিন হৃদরোগের প্রতিরোধে কার্যকরী।
১.৬ কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন
  • খাবার: চিকেন, তুরস্ক, ডাল, মসুর ডাল, সয়া, টোফু, এবং চীজের পরিবর্তে গ্রিক দই।
  • কার্যকারিতা: কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন শরীরের শক্তির জন্য প্রয়োজনীয়, তবে এটি হার্টের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং কোলেস্টেরল বাড়ায় না।

 

২. হৃদয় সুস্থ রাখার জন্য কাজ

 

২.১ নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ
  • কাজ: নিয়মিত ব্যায়াম হার্টের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা বা মৃদু যোগব্যায়াম করার মাধ্যমে হার্ট সুস্থ রাখা যায়।
  • কার্যকারিতা: শারীরিক কার্যকলাপ হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তের কোলেস্টেরল এবং সুগার লেভেল কমায়।
২.২ ওজন নিয়ন্ত্রণ
  • কাজ: শরীরের অতিরিক্ত ওজন হারানো এবং স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা হৃদযন্ত্রের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত মেদ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • কার্যকারিতা: সঠিক ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমিয়ে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
২.৩ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
  • কাজ: রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
  • কার্যকারিতা: এই পরীক্ষা হৃদরোগের ঝুঁকি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে এবং যেকোনো সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার আগেই চিকিৎসা নেওয়া যায়।
২.৪ মানসিক চাপ কমানো
  • কাজ: ধ্যান, যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাস প্রশ্বাস, এবং অন্যান্য শিথিলকারী কৌশলগুলি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • কার্যকারিতা: মানসিক চাপ হৃদরোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ফ্যাক্টর, তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। যোগব্যায়াম, হালকা হাঁটা বা সঙ্গীত শোনা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
২.৫ ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা
  • কাজ: ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান হৃদরোগের জন্য অন্যতম ঝুঁকি। এসব অভ্যাস হার্টের ক্ষতি করে।
  • কার্যকারিতা: ধূমপান হৃদরোগের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মদ্যপানও হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক হতে পারে। তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২.৬ পর্যাপ্ত ঘুম
  • কাজ: পর্যাপ্ত ঘুম (৭-৮ ঘণ্টা) হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • কার্যকারিতা: ঘুমের অভাব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, কারণ এটি রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল বাড়াতে সহায়ক। সুতরাং, রাতে ভালো ঘুম নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

 

হার্টঅ্যাটাক হলে প্রাথমিক ভাবে করনীয়:

হার্টঅ্যাটাক (মায়োকর্ডিয়াল ইনফার্কশন) হলে প্রাথমিকভাবে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। একজন ডাক্তার বা চিকিৎসকরা সাধারণত এই ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হবে সে সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। এখানে হার্টঅ্যাটাকের প্রাথমিক প্রতিকার সম্পর্কে ডাক্তারদের পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. তাড়াতাড়ি ৯৯৯ বা অ্যাম্বুলেন্স কল করুন
  • পদক্ষেপ: হার্টঅ্যাটাকের প্রথম লক্ষণ দেখা দিলে, দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স কল করুন। কারণ, হার্টঅ্যাটাকের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা পেলে তার পরিণতি অনেক ভালো হতে পারে।
  • পরামর্শ: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জরুরি চিকিৎসা সেবা পেতে হবে। ৯৯৯ (বাংলাদেশে) বা অ্যাম্বুলেন্স নম্বরে কল করতে ভুলবেন না।
২. বিশ্রাম নেওয়া এবং শান্ত থাকা
  • পদক্ষেপ: হার্টঅ্যাটাকের সময় শারীরিক চাপ বা উদ্বেগ অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। তাই যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা যাবে না। বিছানায় শুয়ে বা বসে থাকুন এবং শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
  • পরামর্শ: উত্তেজনা বা অস্থিরতা হার্টের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। তাই মানসিকভাবে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
৩. অ্যাসপিরিন খাওয়া (যদি উপযুক্ত হয়)
  • পদক্ষেপ: যদি রোগী হৃদরোগের ইতিহাস জানেন এবং তিনি অ্যালার্জি বা অন্য কোনো সমস্যা না হন, তবে এক টুকরা অ্যাসপিরিন (যদি হাতের কাছে থাকে) খাওয়া যেতে পারে। এটি রক্তকে পাতলা করে এবং ব্লকড আর্টারি খোলার জন্য সহায়তা করতে পারে।
  • পরামর্শ: অ্যাসপিরিন খাওয়ার পরামর্শ শুধুমাত্র ডাক্তার বা চিকিৎসকের অনুমতিতে নিতে হবে। কেউ যদি অ্যাসপিরিনের প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তবে এটি গ্রহণ করা উচিত নয়।
৪. অক্সিজেন গ্রহণ (যদি প্রয়োজন হয়)
  • পদক্ষেপ: রোগী শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে, হাসপাতাল বা অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন সরবরাহ করা হতে পারে।
  • পরামর্শ: হার্টঅ্যাটাকের সময় অক্সিজেন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি হৃদয়ের মাংসপেশীকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
৫. হালকা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা
  • পদক্ষেপ: শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে, রোগীকে গভীর এবং স্থিরভাবে শ্বাস নিতে বলা হয়। তবে এটি করা না গেলে, তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া উচিত।
  • পরামর্শ: শ্বাসের গতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে কিছু সময় রাখুন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
৬. ব্রেস্ট পেইন (বুকে ব্যথা) কমানোর চেষ্টা
  • পদক্ষেপ: যদি হার্টঅ্যাটাকের সময় বুকে তীব্র ব্যথা হয়, তবে এটি সঠিকভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে কমানো যেতে পারে। তবে, নিজে কোনো ধরনের ব্যথানাশক গ্রহণ করার আগে ডাক্তারকে পরামর্শ করা উচিত।
  • পরামর্শ: ডাক্তাররা সাধারণত হার্টঅ্যাটাকের চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য কিছু ওষুধ ব্যবহার করেন।
৭. কোনো কিছু খাওয়ার চেষ্টা না করা
  • পদক্ষেপ: হার্টঅ্যাটাকের সময় খাবার খাওয়া উচিত নয়, বিশেষত যদি শ্বাসকষ্ট বা বমি বমি ভাব থাকে। খাবার খেলে পেটের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং চিকিৎসা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
  • পরামর্শ: রোগী যদি একদমই না খেতে চান, তবে কোনো খাবার গ্রহণ না করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
৮. হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছানো
  • পদক্ষেপ: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতাল পৌঁছাতে হবে, কারণ একমাত্র সেখানে ইসিজি, ব্লাড টেস্ট এবং অন্যান্য পরীক্ষা করে হার্টঅ্যাটাক নিশ্চিত করা সম্ভব।
  • পরামর্শ: হাসপাতালে পৌঁছানোর পরে চিকিৎসকরা আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা শুরু করবেন। এর মধ্যে থাকতে পারে রক্তনালী খোলার জন্য থ্রম্বোলাইটিক চিকিৎসা, স্টেন্ট প্লেসমেন্ট, অথবা বাইপাস সার্জারি।

 

উপসংহার:

হার্ট সুস্থ রাখতে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানো, এবং অন্যান্য সুস্থ অভ্যাস অনুসরণ করে আমরা সহজেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারি এবং একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারি।

 

……………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………

 

হার্টঅ্যাটাক নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)

হার্টঅ্যাটাক (মায়োকর্ডিয়াল ইনফার্কশন) একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা, এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন মানুষের মনে থাকে

১. হার্টঅ্যাটাক কি?

উত্তর: হার্টঅ্যাটাক তখন ঘটে যখন হৃদপিণ্ডের রক্তনালী ব্লক হয়ে যায়, যার ফলে হৃদপিণ্ডের অংশে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছানো বন্ধ হয়ে যায়। এটি হৃদপিণ্ডের পেশীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ধমনীতে প্লাক জমা হওয়ায় ব্লকেজ সৃষ্টি হয়।

২. হার্টঅ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ কী কী?

উত্তর:

  • বুকে তীব্র বা সঙ্কুচিত ব্যথা
  • বুকে চাপ অনুভব করা
  • শ্বাসকষ্ট
  • ঘামাচি বা ঠান্ডা ঘাম
  • বমি বা বমি ভাব
  • মাথা ঘুরানো বা মাথাব্যথা
  • পাঁজরের নিচে ব্যথা বা অস্বস্তি (যা সাধারণত হাত, পিঠ, বা গলায় ছড়িয়ে পড়ে)
৩. হার্টঅ্যাটাকের কারণ কী?

উত্তর: হার্টঅ্যাটাকের প্রধান কারণ হলো ধমনীর ব্লকেজ। এই ব্লকেজ হতে পারে:

  • উচ্চ কোলেস্টেরল বা প্লাক জমে যাওয়া
  • রক্তচাপের সমস্যা
  • ডায়াবেটিস
  • ধূমপান
  • মানসিক চাপ
  • শারীরিক অপ্রস্তুতি বা অবসন্নতা
৪. হার্টঅ্যাটাক হলে কি করণীয়?

উত্তর:

  • দ্রুত ৯৯৯ বা স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে কল করুন
  • যদি সম্ভব হয়, ১টি অ্যাসপিরিন খান (যদি অ্যালার্জি না থাকে)
  • শান্ত থাকুন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • বিশ্রাম নিন এবং অতিরিক্ত শারীরিক চাপ এড়িয়ে চলুন
  • দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন
৫. হার্টঅ্যাটাকের পর কি পুনরুদ্ধারের জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন?

উত্তর: হ্যাঁ, হার্টঅ্যাটাকের পর চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা সাধারণত স্টেন্ট প্লেসমেন্ট, বাইপাস সার্জারি, থ্রম্বোলাইটিক চিকিৎসা বা ওষুধের মাধ্যমে রক্তনালীগুলি খুলে ফেলতে পারেন। এছাড়া, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, লাইফস্টাইল পরিবর্তন, এবং ওষুধের মাধ্যমে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া চলে।

৬. হার্টঅ্যাটাকের জন্য কি বিশেষ খাবার বা ডায়েট অনুসরণ করা উচিত?

উত্তর:

  • কম চর্বিযুক্ত এবং কম সোডিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যেমন শস্য, ফল, এবং সবজি বেশি খাওয়া উচিত
  • মাছ, বিশেষ করে স্যামন ও ম্যাকারেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস
  • প্রোটিনের জন্য তুরস্ক, চিকেন, মসুর ডাল এবং সয়া খাবার উপযুক্ত
  • অতিরিক্ত চিনি এবং অ্যালকোহল পরিহার করা উচিত
৭. কোন বয়সে হার্টঅ্যাটাক হতে পারে?

উত্তর: হার্টঅ্যাটাক যেকোনো বয়সেই হতে পারে, তবে সাধারণত এটি ৪০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং ৫০-৫৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে, অল্প বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে জীবনযাত্রার খারাপ অভ্যাস, উচ্চ কোলেস্টেরল, ওজন সমস্যা বা ডায়াবেটিস থাকলে হার্টঅ্যাটাক হতে পারে।

৮. হার্টঅ্যাটাকের পর কীভাবে জীবনের মান উন্নত করা যায়?

উত্তর:

  • নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ করা
  • সঠিক ডায়েট অনুসরণ করা
  • মানসিক চাপ কমানো
  • ধূমপান বা অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা
  • পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া
  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
৯. হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন কোন কারণগুলো আছে?

উত্তর:

  • উচ্চ রক্তচাপ
  • উচ্চ কোলেস্টেরল
  • ডায়াবেটিস
  • অতিরিক্ত ওজন
  • ধূমপান
  • অনিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ
  • পারিবারিক ইতিহাস (হার্টঅ্যাটাকের পরিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়)
  • মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ
১০. হার্টঅ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর:

  • হার্টঅ্যাটাক: হৃদপিণ্ডের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে, যা হৃদয়ের পেশীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
  • স্ট্রোক: মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা বাধা পড়লে স্ট্রোক ঘটে, যা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

No comment yet, add your voice below!


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *