Skip to content

হেপাটাইটিস: প্রকারভেদ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ

ভূমিকা

হেপাটাইটিস হল লিভারের একটি প্রদাহজনিত রোগ যা ভাইরাস, অ্যালকোহল সেবন, অটোইমিউন রোগ এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের কারণে হতে পারে। এটি বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই নিবন্ধে, আমরা হেপাটাইটিসের প্রকারভেদ, লক্ষণ, কারণ ও প্রতিরোধের বিস্তারিত আলোচনা করব।

হেপাটাইটিসের প্রকারভেদ

হেপাটাইটিস প্রধানত পাঁচটি প্রকারে বিভক্ত, যা হেপাটাইটিস ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। এগুলো হলো:

  1. হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A)
  2. হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B)
  3. হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C)
  4. হেপাটাইটিস ডি (Hepatitis D)
  5. হেপাটাইটিস ই (Hepatitis E)

প্রতিটি প্রকারের আলাদা কারণ, সংক্রমণ পদ্ধতি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে।

১. হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A)

হেপাটাইটিস এ ভাইরাস (HAV) দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং সাধারণত দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এটি সাধারণত তীব্র হয় কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

সংক্রমণের কারণ:
  • দূষিত পানি পান করা
  • অপরিষ্কার খাবার খাওয়া
  • সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা
লক্ষণ:
  • জ্বর
  • বমি
  • দুর্বলতা
  • চোখ ও ত্বক হলুদ হওয়া (জন্ডিস)
প্রতিরোধ:
  • হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন গ্রহণ
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
  • নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
২. হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B)

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এটি রক্ত, বীর্য ও অন্যান্য শারীরিক তরলের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

সংক্রমণের কারণ:
  • সংক্রমিত ব্যক্তির রক্তের সংস্পর্শে আসা
  • অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক
  • সংক্রমিত সূঁচ বা ইনজেকশনের ব্যবহার
  • মায়ের কাছ থেকে নবজাতকের শরীরে সংক্রমণ
লক্ষণ:
  • ক্ষুধামন্দা
  • বমি
  • জন্ডিস
  • গাঁটে ব্যথা
  • পেট ফাঁপা
প্রতিরোধ:
  • হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন
  • নিরাপদ যৌন সম্পর্ক
  • একবার ব্যবহারযোগ্য ইনজেকশন ও সুঁচ ব্যবহার
  • রক্ত সংক্রমণ পরীক্ষা করা
৩. হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C)

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (HCV) দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এটি রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ফেইলিউরের কারণ হতে পারে।

সংক্রমণের কারণ:
  • দূষিত সূঁচ ও ইনজেকশন
  • সংক্রমিত রক্ত গ্রহণ
  • অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক (কম ক্ষেত্রে)
লক্ষণ:
  • ক্লান্তি
  • জন্ডিস
  • পেট ব্যথা
  • ক্ষুধামন্দা
প্রতিরোধ:
  • নিরাপদ ইনজেকশন ও রক্ত পরিশোধন
  • হেপাটাইটিস সি ভ্যাকসিন (এখনো কার্যকরী ভ্যাকসিন নেই)
  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা
৪. হেপাটাইটিস ডি (Hepatitis D)

হেপাটাইটিস ডি শুধুমাত্র হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তিদের হতে পারে, কারণ এটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের উপর নির্ভরশীল।

সংক্রমণের কারণ:
  • সংক্রমিত রক্তের মাধ্যমে
  • যৌন সম্পর্ক
  • মায়ের থেকে সন্তানের শরীরে সংক্রমণ
লক্ষণ:
  • পেট ব্যথা
  • বমি
  • জন্ডিস
প্রতিরোধ:
  • হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন গ্রহণ
  • নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন
৫. হেপাটাইটিস ই (Hepatitis E)

হেপাটাইটিস ই ভাইরাস (HEV) দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায় এবং সাধারণত তীব্র সংক্রমণ ঘটায়।

সংক্রমণের কারণ:
  • দূষিত পানি
  • অপরিষ্কার খাবার
লক্ষণ:
  • জন্ডিস
  • ক্লান্তি
  • ক্ষুধামন্দা
  • বমি
প্রতিরোধ:
  • বিশুদ্ধ পানি পান করা
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
  • হেপাটাইটিস ই ভ্যাকসিন (কিছু দেশে উপলব্ধ)

 

হেপাটাইটিস নির্ণয় ও চিকিৎসা

হেপাটাইটিস হলো লিভারের প্রদাহজনিত রোগ, যা ভাইরাস, অ্যালকোহল, টক্সিন, বা অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে। এটি প্রধানত পাঁচটি ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত হয়—হেপাটাইটিস A, B, C, D, এবং E।

 

হেপাটাইটিসের ধরন ও কারণ

ধরন সংক্রমণের কারণ সংক্রমণের পথ
হেপাটাইটিস A (HAV) ভাইরাসজনিত সংক্রমণ দূষিত খাদ্য-পানীয়, মলমূত্রজনিত সংক্রমণ
হেপাটাইটিস B (HBV) ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রক্ত, অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, মায়ের দুধ
হেপাটাইটিস C (HCV) ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রক্তের মাধ্যমে, ইনজেকশন বা অপরিষ্কার সূঁচ
হেপাটাইটিস D (HDV) শুধুমাত্র HBV আক্রান্তদের হয় রক্ত ও শরীরের অন্যান্য তরল
হেপাটাইটিস E (HEV) দূষিত পানি ও খাদ্য দূষিত পানি, মলমূত্রজনিত সংক্রমণ

হেপাটাইটিসের লক্ষণ

হেপাটাইটিসের লক্ষণ সংক্রমণের ধরন ও পর্যায়ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণ লক্ষণবিহীন থাকতে পারে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

সাধারণ লক্ষণসমূহ:

শারীরিক দুর্বলতা ও অতিরিক্ত ক্লান্তি
বমিভাব ও বমি
ক্ষুধামন্দা
জ্বর (সাধারণত হালকা)
পেটে ব্যথা, বিশেষত ডানদিকে (লিভারের অবস্থান)
মল ও প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন – মল ফ্যাকাশে ও প্রস্রাব গাঢ় হতে পারে
ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হওয়া (জন্ডিস)

 

হেপাটাইটিসের প্রকারভেদ অনুযায়ী লক্ষণ:

হেপাটাইটিস A ও E:

➡ সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়
➡ জন্ডিস, বমি, পেটব্যথা, হালকা জ্বর হতে পারে
➡ সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ও গুরুতর হয় না

হেপাটাইটিস B ও C:

➡ সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে
➡ প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে
➡ দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে

হেপাটাইটিস D:

➡ এটি কেবলমাত্র হেপাটাইটিস B আক্রান্তদের ক্ষেত্রে হয়
➡ দ্রুত গুরুতর লিভার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়

 

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?

যদি উপরের লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা যায়
দীর্ঘদিন ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া বা জন্ডিস থাকে
গাঢ় প্রস্রাব ও ফ্যাকাশে মল দেখা যায়
তীব্র পেটব্যথা হয়

 

হেপাটাইটিস নির্ণয় পদ্ধতি

১. শারীরিক পরীক্ষা:

লিভারের আকার ও সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করা হয়।

২. রক্ত পরীক্ষা:
  • Liver Function Test (LFT): লিভারের এনজাইম ও প্রোটিনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
  • Viral Markers Test: হেপাটাইটিস ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
৩. আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান:

লিভারের আকার পরিবর্তন ও প্রদাহ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

৪. লিভার বায়োপসি:

যদি দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিসের কারণে লিভার সিরোসিস বা ফাইব্রোসিসের আশঙ্কা থাকে, তাহলে লিভার বায়োপসি করা হয়।

 

হেপাটাইটিসের চিকিৎসা

১. হেপাটাইটিস A ও E
  • সাধারণত বিশ্রাম ও স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে সেরে যায়।
  • প্রচুর পানি পান করতে হয়।
  • গুরুতর সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সাপোর্টিভ কেয়ার নেওয়া যেতে পারে।
২. হেপাটাইটিস B ও D
  • অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ: টেনোফোভির, এন্টেকাভির ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
  • ইন্টারফেরন থেরাপি: দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
  • লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকলে: উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
৩. হেপাটাইটিস C
  • ডিরেক্ট-অ্যাক্টিং অ্যান্টিভাইরাল (DAA) ওষুধ: সোফোসবুভির, লেডিপাসভির, ভেলপাটাসভির ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
  • ৮-১২ সপ্তাহের চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
৪. গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসা
  • দীর্ঘমেয়াদি লিভার সিরোসিস বা লিভার ফেইলিওরের ক্ষেত্রে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন হতে পারে।

 

হেপাটাইটিস প্রতিরোধের উপায়

হেপাটাইটিস A ও E প্রতিরোধ:

  • বিশুদ্ধ পানি পান করা
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
  • স্যানিটেশন ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

হেপাটাইটিস B ও C প্রতিরোধ:

  • টিকা গ্রহণ: হেপাটাইটিস B এর জন্য টিকা রয়েছে।
  • নিরাপদ রক্ত সংক্রমণ: অপরিষ্কার সুই ও ব্যবহৃত রক্ত পরিহার করা।
  • নিরাপদ যৌন সম্পর্ক: কনডম ব্যবহার করা।
  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি: নিজের রেজর ও টুথব্রাশ অন্যের সাথে ভাগ না করা।

হেপাটাইটিস প্রতিরোধের উপায়

১. ভ্যাকসিন গ্রহণ: হেপাটাইটিস এ ও বি’র জন্য কার্যকরী ভ্যাকসিন রয়েছে। 2. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: হাত ধোয়া, বিশুদ্ধ পানি পান করা ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ। 3. নিরাপদ যৌন সম্পর্ক: কনডম ব্যবহার করা ও একাধিক সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্ক এড়ানো। 4. রক্ত পরিশোধন: রক্ত গ্রহণের আগে পরীক্ষা করা। 5. নিরাপদ ইনজেকশন: একবার ব্যবহারযোগ্য সূঁচ ব্যবহার করা।

১. টিকাদান (Vaccination)

হেপাটাইটিস A এবং B-এর জন্য কার্যকর টিকা রয়েছে।
✔ নবজাতক, স্বাস্থ্যকর্মী, এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের হেপাটাইটিস B টিকা নেওয়া উচিত।
✔ হেপাটাইটিস A-এর টিকা প্রধানত শিশু এবং যেসব ব্যক্তি দূষিত খাবার ও পানির সংস্পর্শে আসেন তাদের জন্য সুপারিশ করা হয়।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও বিশুদ্ধ পানি গ্রহণ

✔ সবসময় পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে
✔ রাস্তার খাবার বা অপরিষ্কার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
✔ কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ মাছ-মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
✔ ফল ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।

৩. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, বিশেষত খাবার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পরে।
✔ নিজস্ব টুথব্রাশ, নখ কাটার, রেজর বা ইনজেকশনের সুই অন্যের সাথে ভাগ করবেন না।
✔ শরীরে কাটা-ছেঁড়া হলে দ্রুত জীবাণুমুক্ত করুন এবং পরিষ্কার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করুন।

৪. নিরাপদ রক্ত ও ইনজেকশন ব্যবহার

পরীক্ষিত ও নিরাপদ রক্ত গ্রহণ করুন
✔ সবসময় নতুন ও জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জ ব্যবহার করুন
✔ চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনিরাপদ ইনজেকশন ও রক্ত গ্রহণের ঝুঁকি এড়াতে হবে

৫. সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা

হেপাটাইটিস B এবং C যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়াতে পারে
✔ নিরাপদ যৌন অভ্যাস গড়ে তুলতে কনডম ব্যবহার করুন

৬. মাদক ও অ্যালকোহল পরিহার করা

✔ অ্যালকোহল লিভারের ক্ষতি করে এবং হেপাটাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
✔ ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করলে হেপাটাইটিস B ও C-এর সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

হেপাটাইটিস একটি গুরুতর লিভার রোগ যা প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হলে এই রোগের ঝুঁকি কমানো যায়। তাই, হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই আমাদের সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

 

হেপাটাইটিস: প্রকারভেদ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ (FAQ)

প্রশ্ন ১: হেপাটাইটিসের কয়টি ধরন রয়েছে?

উত্তর: হেপাটাইটিস প্রধানত পাঁচটি ভাইরাসের কারণে হয়:

  1. হেপাটাইটিস A (HAV)
  2. হেপাটাইটিস B (HBV)
  3. হেপাটাইটিস C (HCV)
  4. হেপাটাইটিস D (HDV)
  5. হেপাটাইটিস E (HEV)
প্রশ্ন ২: হেপাটাইটিসের লক্ষণ কী কী?

উত্তর: হেপাটাইটিসের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  • জ্বর
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • ক্ষুধামন্দা
  • বমি বা বমি বমি ভাব
  • পেট ব্যথা
  • গা ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)
  • গাঢ় রঙের প্রস্রাব ও হালকা রঙের মল
  • চুলকানি
প্রশ্ন ৩: হেপাটাইটিস কীভাবে ছড়ায়?

উত্তর:

ধরন সংক্রমণের মাধ্যম
হেপাটাইটিস A (HAV) দূষিত পানি ও খাদ্য, মলমূত্রজনিত সংক্রমণ
হেপাটাইটিস B (HBV) রক্ত, অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, মায়ের দুধ, ইনজেকশন
হেপাটাইটিস C (HCV) দূষিত রক্ত, ইনজেকশন, আক্রান্ত রক্তের সংস্পর্শ
হেপাটাইটিস D (HDV) শুধুমাত্র হেপাটাইটিস B আক্রান্তদের হয়
হেপাটাইটিস E (HEV) দূষিত পানি ও খাদ্য
প্রশ্ন ৪: হেপাটাইটিস কতটা গুরুতর?

উত্তর:

  • হেপাটাইটিস A ও E সাধারণত সেলফ-লিমিটেড হয় এবং নিজে থেকেই সেরে যায়।
  • হেপাটাইটিস B, C, ও D দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে এবং লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • হেপাটাইটিস C নিরাময়যোগ্য হলেও চিকিৎসা না করালে প্রাণঘাতী হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: হেপাটাইটিসের বিরুদ্ধে টিকা কীভাবে সাহায্য করে?

উত্তর:

  • হেপাটাইটিস A ও B এর জন্য টিকা পাওয়া যায়।
  • হেপাটাইটিস C, D ও E এর জন্য কোনো অনুমোদিত টিকা নেই।
প্রশ্ন ৬: হেপাটাইটিস প্রতিরোধের উপায় কী?

উত্তর:
✔ বিশুদ্ধ পানি পান করা
✔ স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা
✔ অপরিষ্কার সুই ও রক্ত পরিহার করা
✔ নিরাপদ যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা
✔ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা
✔ হেপাটাইটিস B-এর টিকা গ্রহণ করা

প্রশ্ন ৭: কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আমি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত?

উত্তর:
হেপাটাইটিস নির্ণয়ের জন্য নিচের পরীক্ষাগুলো করা হয়:

  • রক্ত পরীক্ষা (Liver Function Test, Viral Markers Test)
  • আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান
  • লিভার বায়োপসি (প্রয়োজনে)
প্রশ্ন ৮: হেপাটাইটিস হলে চিকিৎসা কী?

উত্তর:

  • হেপাটাইটিস A ও E: বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার
  • হেপাটাইটিস B ও C: অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (যেমন টেনোফোভির, সোফোসবুভির)
  • গুরুতর ক্ষেত্রে: লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন হতে পারে

No comment yet, add your voice below!


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *