Skip to content

সুস্থ শরীরের জন্য নিয়মিত জিম: শুরু করবেন কীভাবে

আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্য ভালো রাখা যেন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দূষণ, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, বসে কাজ করার প্রবণতা, মানসিক চাপ — এসব কিছু মিলিয়ে শরীর ও মনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এমন পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা অত্যন্ত জরুরি। আর সেই শরীরচর্চার অন্যতম কার্যকর মাধ্যম হচ্ছে জিম

জিম কেন করা দরকার:

১. শারীরিক সুস্থতা ও ফিটনেস বৃদ্ধি

জিমে নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ সচল থাকে। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, পেশি মজবুত হয় এবং দেহের স্থিতিশীলতা ও নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, বাতের সমস্যা ইত্যাদি অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

২. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন

ব্যায়াম করলে শরীরে এন্ডোরফিন (endorphin) নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো করতে সাহায্য করে। জিমে নিয়মিত গেলে উদ্বেগ (anxiety), মানসিক চাপ (stress), বিষণ্ণতা (depression) ইত্যাদি কমে যায় এবং মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ ও স্থূলতা প্রতিরোধ

বর্তমানে স্থূলতা একটি মারাত্মক সমস্যা, যা অনেক রোগের উৎস। জিমে কার্ডিও, ট্রেডমিল, ওজন উত্তোলন ইত্যাদি চর্চা করে অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করা যায়, যা ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৪. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন

শরীর সুস্থ থাকলে ঘুম ভালো হয়, হজম প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হয় এবং কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। এই সব কিছু মিলিয়ে জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়।

৫. নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার প্রবণতা

জিমে গেলে নিজের শরীরের অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে। কী খাওয়া উচিত, কী নয় – সেই বিষয়ে জ্ঞান বাড়ে এবং একটা স্বাস্থ্যকর জীবনধারার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।

৬.রুটিন গঠন

জিমে যাওয়া মানে নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তোলা। এটি একজন ব্যক্তির মধ্যে শৃঙ্খলা ও সময়জ্ঞান তৈরি করে, যা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৭. সামাজিক যোগাযোগের সুযোগ

জিমে বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে, যারা সবাই ফিটনেসের জন্য কাজ করছেন। এতে এক ধরনের সামাজিক বন্ধন ও মোটিভেশন তৈরি হয়।

৮. বয়সভিত্তিক সুস্থতা রক্ষা

যুবক, মধ্যবয়সী, এমনকি প্রবীণ ব্যক্তিরাও নির্দিষ্ট নিয়মে জিমে শরীরচর্চা করলে বয়সের ছাপ কম পড়ে এবং শরীর দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকে।

জিম শুরু করার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি:

নতুনদের জন্য জিমে যাওয়া অনেক সময় ভয় বা সংকোচের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো যা আপনাকে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।

১. স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Medical Check-up)

জিম শুরু করার আগে আপনার শরীরের বর্তমান অবস্থা জানাটা জরুরি, বিশেষ করে যদি আপনার বয়স ৩০-এর উপরে হয় বা কোনো দীর্ঘমেয়াদী অসুখ (যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি) থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিত হোন যে আপনি শরীরচর্চার জন্য উপযুক্ত কি না।

২. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ (Set Your Fitness Goal)

আপনি কী চান – ওজন কমাতে, পেশি বাড়াতে, শক্তি বাড়াতে, না কি সাধারণ ফিটনেস ধরে রাখতে? লক্ষ্য অনুযায়ী আপনার ব্যায়াম ও খাদ্য পরিকল্পনা ভিন্ন হবে। তাই লক্ষ্য স্পষ্ট না হলে জিমে গিয়ে সঠিক ফলাফল পাওয়া কঠিন।

৩. অভিজ্ঞ ট্রেইনারের সাহায্য নিন

নতুনদের জন্য একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ জিম ট্রেইনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আপনার শরীর অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যায়াম নির্বাচন করবেন, সঠিকভাবে শিখিয়ে দেবেন এবং অনুপ্রেরণা জোগাবেন। ভুল পদ্ধতিতে ব্যায়াম করলে ইনজুরি হতে পারে।

৪. সঠিক ডায়েট প্ল্যান সম্পর্কে ধারণা

শুধু ব্যায়াম করলেই হবে না – সঠিক ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, পানি – সবকিছুর সঠিক ভারসাম্য প্রয়োজন। খাদ্যাভ্যাস না পাল্টালে জিমে ফল পাওয়া কঠিন।

৫. ধৈর্য ও ধারাবাহিকতা প্রয়োজন

শরীরের পরিবর্তন একদিনে হয় না। অনেকেই দ্রুত ফল পেতে চায়, কিন্তু ফিটনেস অর্জন ধাপে ধাপে হয়। তাই ধৈর্য ধরে, ধীরে ধীরে রুটিন অনুসরণ করতে হবে।

৬. উপযুক্ত পোশাক ও জুতা

জিমে যাওয়ার জন্য হালকা, আরামদায়ক এবং শরীর শুষ্ক রাখে এমন কাপড় পরা জরুরি। একই সঙ্গে উপযুক্ত গ্রিপযুক্ত জুতা পরা প্রয়োজন যাতে করে ভারোত্তোলন বা কার্ডিও করতে গিয়ে পা না পিছলে পড়ে যান।

৭. হাইড্রেশন ও বিশ্রাম

শরীরচর্চার সময় প্রচুর পানি খরচ হয়, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এছাড়া, শরীরচর্চার পর যথেষ্ট বিশ্রাম ও ঘুম প্রয়োজন, যাতে পেশি পুনরায় গঠিত হতে পারে এবং শরীর ক্লান্ত না হয়ে পড়ে।

৮. ওয়ার্ম-আপ ও কুল-ডাউন গুরুত্বপূর্ণ

প্রত্যেক ব্যায়ামের আগে হালকা ওয়ার্ম-আপ এবং পরে কুল-ডাউন ব্যায়াম করা জরুরি। এটি শরীরকে প্রস্তুত করে ও ইনজুরির ঝুঁকি কমায়।

৯. বেশি উৎসাহে ভুল না করা

শুরুতেই অনেকেই অতিরিক্ত ওজন তোলা, দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করার চেষ্টা করে – যা বিপজ্জনক হতে পারে। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় ও তীব্রতা বাড়ানো উচিত।

১০. সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে সাবধানতা

অনেকেই দ্রুত পেশি বানাতে সাপ্লিমেন্ট খেতে শুরু করেন, যা সবসময় নিরাপদ নয়। চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়।

জিম শুরু করার ধাপ:

১. নিজেকে প্রস্তুত করুন (Mental Preparation)
  • জিমে যাওয়া মানে শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি একটি লাইফস্টাইল পরিবর্তনের অংশ।

  • প্রথমেই নিজের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করুন – ওজন কমানো, পেশি গঠন, ফিটনেস বজায় রাখা, না কি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা?

  • মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন নিয়মিত সময় বের করতে ও ধৈর্য ধরে এগোতে।

২. স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন (Medical Check-Up)
  • আগে থেকে কোনো রোগ থাকলে বা আপনি ৩০+ বয়সের হয়ে থাকলে, একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

  • উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ থাকলে, ব্যায়ামের ধরন সেই অনুযায়ী নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

৩. উপযুক্ত জিম নির্বাচন করুন
  • আপনার বাসা বা অফিসের কাছাকাছি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসম্পন্ন জিম বেছে নিন।

  • একজন অভিজ্ঞ ট্রেইনার আছেন কি না, জিমের পরিবেশ কেমন – এসব বিবেচনায় নিন।

৪. সঠিক পোশাক ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করুন
  • আরামদায়ক ও স্পোর্টস-উপযোগী জামা, ট্রাউজার এবং ভালো মানের স্পোর্টস জুতা ব্যবহার করুন।

  • পানি পানের বোতল, তোয়ালে এবং ব্যাগও সঙ্গে রাখুন।

৫. ফিটনেস মূল্যায়ন করুন (Fitness Assessment)
  • একজন ট্রেইনারের সাহায্যে নিজের শরীরের বর্তমান অবস্থা যাচাই করুন – ওজন, উচ্চতা, BMI, শরীরের ফ্যাট পার্সেন্টেজ ইত্যাদি।

  • এটি আপনার রুটিন ঠিক করতে সাহায্য করবে।

৬. একটি রুটিন বা পরিকল্পনা তৈরি করুন
  • সপ্তাহে কতদিন যাবেন, কোন দিন কী ব্যায়াম করবেন – সেই অনুযায়ী একটি সাপ্তাহিক প্ল্যান তৈরি করুন।

  • নতুনদের জন্য শুরুতে ৩-৪ দিন যথেষ্ট, অতিরিক্ত চাপ দেওয়া ঠিক নয়।

৭. ওয়ার্ম-আপ দিয়ে শুরু করুন
  • জিমে ঢুকে সরাসরি ভারোত্তোলন বা কঠিন ব্যায়াম নয়।

  • আগে ৫–১০ মিনিট হালকা কার্ডিও, স্ট্রেচিং, জাম্পিং ইত্যাদি করে শরীর গরম করুন।

৮. নির্ধারিত ব্যায়ামগুলো করুন
  • ট্রেইনারের সাহায্যে বডি পার্ট অনুযায়ী ব্যায়াম করুন – যেমন Chest day, Back day, Leg day ইত্যাদি।

  • একসাথে পুরো শরীরের ব্যায়াম না করে ধাপে ধাপে অগ্রসর হোন।

৯. কুল-ডাউন ও স্ট্রেচিং করুন
  • ওয়ার্কআউট শেষে হালকা স্ট্রেচিং ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করে শরীর শান্ত করুন।

১০. পর্যাপ্ত পানি পান ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
  • শরীরচর্চার পর পর্যাপ্ত পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আবশ্যক।

  • প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন।

১১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম নিন
  • প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি, কারণ শরীর রিকভার হয় ঘুমের সময়েই।

  • একটানা জিম না করে সপ্তাহে ১–২ দিন রেস্ট ডে রাখুন।

খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির দিক নির্দেশনা:

১. প্রোটিন (Protein)

পেশি গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
উৎস: ডিম, চিকেন ব্রেস্ট, মাছ, দুধ, ডাল, চানা, গ্রিক ইয়োগার্ট, পনির, প্রোটিন শেক
পরিমাণ: প্রতিদিন শরীরের ওজন প্রতি কেজি × ১.৫–২ গ্রাম (যদি লক্ষ্য পেশি বাড়ানো হয়)

২. কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrate)

শক্তির উৎস – ওয়ার্কআউট করার এনার্জি দেয়।
উৎস: ব্রাউন রাইস, ওটস, মিষ্টি আলু, পুরো গমের রুটি, ফলমূল
পরিমাণ: নির্ভর করে আপনার লক্ষ্য ও শরীরচর্চার ধরন অনুযায়ী (কম কার্ব ডায়েট বা ব্যালান্সড ডায়েট)

৩. স্বাস্থ্যকর চর্বি (Healthy Fats)

হরমোন ব্যালান্স ও ব্রেইন ফাংশনের জন্য দরকার।
উৎস: অলিভ অয়েল, বাদাম, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড, অ্যাভোকাডো, ডিমের কুসুম
পরিমাণ: মোট ক্যালোরির ২০–৩০% আসা উচিত ফ্যাট থেকে

৪. শাকসবজি ও ফলমূল

ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, হজমে সাহায্য করে।
উৎস: ব্রোকলি, গাজর, পেঁপে, কলা, আপেল, শসা, লেটুস, বেগুন, টমেটো
পরিমাণ: প্রতিদিন ৩–৫ রঙিন শাকসবজি ও ২–৩ রকমের ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন

৫. পানি ও হাইড্রেশন

ওয়ার্কআউটের সময় প্রচুর ঘাম হয়, তাই পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট অপরিহার্য।
সাধারণ নিয়ম: প্রতিদিন ৩–৪ লিটার পানি, ঘাম বেশি হলে আরও বেশি
আরও ভালো: নারকেল পানি, লবণ-চিনি মেশানো পানি, ORS

খাবারের টাইমিং (Meal Timing):

১. ওয়ার্কআউটের আগে (Pre-workout meal)
  • সময়: ব্যায়ামের ৩০–৯০ মিনিট আগে

  • খাবার: কম ফ্যাট, মাঝারি প্রোটিন ও কার্বযুক্ত খাবার

  • উদাহরণ: ওটস + কলা + সামান্য বাদাম, চপটি + ডিম সাদা অংশ

২. ওয়ার্কআউটের পরে (Post-workout meal)
  • সময়: ব্যায়ামের ৩০–৪৫ মিনিটের মধ্যে

  • খাবার: হাই প্রোটিন + কিছু কার্ব

  • উদাহরণ: ডিম + সেদ্ধ আলু, চিকেন ব্রেস্ট + ব্রাউন রাইস, প্রোটিন শেক + কলা

জিমে নতুনদের করা সাধারণ কিছু ভুল:

1. লক্ষ্য নির্ধারণ না করা

অনেকেই জিমে গিয়ে ভাবেন “শরীর ভালো হবে”, কিন্তু কীভাবে? ওজন কমানো, ওজন বাড়ানো, মাংসপেশি গঠন না কি শুধু ফিট থাকা — এই লক্ষ্য নির্ধারণ না করলে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগানো সম্ভব হয় না।

2. ট্রেইনারের নির্দেশনা অনুসরণ না করা

অনেক নতুন সদস্য ট্রেইনারের সাহায্য না নিয়ে নিজের মতো করে যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে ভুল ফর্মে ব্যায়াম করার কারণে ইনজুরি বা পেশি টান খাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

3. প্রথমেই বেশি ভার উত্তোলন করা

শুরুতেই ভারী ওজন তোলার চেষ্টা করলে শরীরে চাপ পড়ে এবং ইনজুরি হতে পারে। ধাপে ধাপে ওজন বাড়ানো উচিত।

4. ওয়ার্ম-আপ না করা

অনেকেই সরাসরি এক্সারসাইজে ঢুকে পড়েন। কিন্তু ওয়ার্ম-আপ না করলে শরীর প্রস্তুত হয় না, ফলে ইনজুরির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

5. প্রতিদিন সব ব্যায়াম একসাথে করা

বডি পার্ট অনুযায়ী সপ্তাহ ভাগ না করে প্রতিদিন সব ব্যায়াম একসঙ্গে করলে পেশি রিকভারি সময় পায় না এবং ফলাফলও আসে ধীরগতিতে।

6. বিশ্রাম না নেওয়া

অনেকে মনে করেন প্রতিদিন একটানা ব্যায়াম করলেই শরীর গঠিত হবে। কিন্তু পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে পেশি গঠন বাধাগ্রস্ত হয় এবং ক্লান্তি জমে যায়।

7. অনিয়মিত হওয়া

কখনো জিমে যাওয়া, কখনো না যাওয়া — এই অনিয়ম শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে এবং ফলাফলও পাওয়া যায় না।

8. ভুল খাওয়াদাওয়া

অনেকেই ভাবেন শুধু ব্যায়ামই যথেষ্ট। কিন্তু পুষ্টির অভাব থাকলে শরীর গঠন হয় না, বরং দুর্বলতা বেড়ে যায়।

9. খুব দ্রুত ফল প্রত্যাশা করা

প্রথম সপ্তাহেই মাংসপেশি গঠনের আশা বাস্তবসম্মত নয়। ধৈর্য ধরে কাজ করতে হয়। তাড়াহুড়া করলে হতাশা আসে।

10. প্রয়োজন ছাড়া সাপ্লিমেন্ট খাওয়া

অনেকে ট্রেন্ড দেখে বা বন্ধুদের পরামর্শে প্রোটিন, গেইনার বা ফ্যাট বার্নার খাওয়া শুরু করেন। কিন্তু এগুলোর ভুল ব্যবহার শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

11. শুধু কার্ডিও বা শুধু ওজন তোলা

শুধু দৌড়ানো বা শুধু ওয়েটলিফটিং করলে পুরো শরীরের সমন্বিত উন্নতি হয় না। একটি ব্যালান্সড রুটিন দরকার।

12. ইনজুরি উপেক্ষা করা

ব্যথা বা অস্বস্তি নিয়েও অনেকেই ব্যায়াম চালিয়ে যান, যা ছোট ইনজুরিকে বড় করে তুলতে পারে।

জিমে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ধরে রাখার কিছু টিপস:

  • সঙ্গী নিয়ে যান: বন্ধুর সঙ্গে গেলে উৎসাহ বাড়ে

  • পছন্দের মিউজিক শোনেন: ব্যায়ামের সময় মিউজিক মনকে ফোকাসড রাখে

  • একটি ডায়রি রাখুন: ওজন, মাপ, ফিলিং – সবকিছু নোট করুন

  • ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: সপ্তাহে ৩ দিন, ৩০ মিনিট ইত্যাদি

বয়সভেদে জিম করার উপকারিতা:

  • ১৮–৩০ বছর: পেশি গঠন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

  • ৩০–৫০ বছর: ওজন নিয়ন্ত্রণ, মেটাবলিজম উন্নত

  • ৫০ বছরের উপরে: জয়েন্ট শক্তি, হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

সুস্থ শরীরের জন্য নিয়মিত জিম: শুরু করবেন কীভাবে – FAQ

১. জিম কি সত্যিই প্রয়োজন, না বাড়িতেই ব্যায়াম যথেষ্ট?

উত্তর:
বাড়িতেও ব্যায়াম করা যায়, তবে জিমে আরও উন্নত যন্ত্রপাতি, পরিবেশ, ও প্রশিক্ষকের সহায়তা থাকে। যারা নিয়মিত ও সিরিয়াসলি ফিটনেস নিয়েছেন, তাদের জন্য জিম অনেক কার্যকর।

২. জিমে যেতে চাই, কিন্তু কতদিন ব্যায়াম করবো?

উত্তর:
সপ্তাহে অন্তত ৩–৫ দিন নিয়মিত ব্যায়াম করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। শুরুতে ৩ দিন দিয়ে শুরু করুন, পরে ধাপে ধাপে বাড়াতে পারেন।

৩. প্রথম দিন জিমে গেলে কী কী করতে হবে?

উত্তর:
প্রথম দিন হালকা ওয়ার্ম-আপ, ফিটনেস মূল্যায়ন এবং শরীরচর্চার পরিকল্পনা করা উচিত। ট্রেইনারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করুন, কোনো ভারী যন্ত্র বা ওজন না তোলাই ভালো।

৪. কোন সময় জিমে যাওয়া সবচেয়ে ভালো?

উত্তর:
সকাল (৬–৮টা) বা সন্ধ্যা (৫–৮টা) জিম করার জন্য সেরা সময়। তবে নিজের সুবিধামতো সময় বেছে নিন – মূল কথা হচ্ছে, নিয়মিত হওয়া।

৫. জিম করার আগে খালি পেটে যাওয়া ঠিক কি না?

উত্তর:
না, খালি পেটে জিমে যাওয়া ঠিক নয়। ওয়ার্কআউটের ৩০–৬০ মিনিট আগে হালকা খাবার খেতে হবে – যেমন কলা, ওটস, বাদাম ইত্যাদি।

৬. প্রতিদিন একই ব্যায়াম করবো?

উত্তর:
না। শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা দিন বরাদ্দ করতে হয় – যেমন চেস্ট ডে, ব্যাক ডে, লেগ ডে ইত্যাদি। এতে পেশি ঠিকভাবে রিকভারি করতে পারে।

৭. নারীদের জন্য জিম কি নিরাপদ ও কার্যকর?

উত্তর:
অবশ্যই। নারীদের জন্য জিম নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। ওজন নিয়ন্ত্রণ, হরমোন ব্যালান্স, মানসিক প্রশান্তি এবং ফিটনেসের জন্য নারীরাও সমানভাবে উপকৃত হন।

৮. জিমে ওজন কমে না বরং বাড়ে – এটা কি স্বাভাবিক?

উত্তর:
শুরুর দিকে পেশি গঠনের কারণে ওজন কিছুটা বাড়তে পারে, তবে শরীর টোনড হয় এবং ফ্যাট কমে। স্কেল নয়, আয়না ও পরিমাপ দিয়ে অগ্রগতি বোঝা ভালো।

৯. সাপ্লিমেন্ট কি খেতে হবে?

উত্তর:
সাধারণত প্রোটিন, কার্ব, ও মিনারেলস সঠিকভাবে খাবার থেকে পেলে সাপ্লিমেন্টের দরকার হয় না। অতিরিক্ত দরকার হলে ট্রেইনার বা নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ নিন।

১০. জিম করার পরে শরীর ব্যথা করে – স্বাভাবিক কি?

উত্তর:
হ্যাঁ, নতুনদের জন্য প্রথম ৩–৫ দিন কিছুটা ব্যথা (DOMS – Delayed Onset Muscle Soreness) স্বাভাবিক। কিন্তু তীব্র ব্যথা বা ইনজুরি হলে ট্রেইনারের সঙ্গে কথা বলুন।

১১. বয়স কত হলে জিম শুরু করা যায়?

উত্তর:
সাধারণভাবে ১৬ বছর বয়সের পর থেকেই জিম শুরু করা যায়। তবে হালকা ফিটনেস ট্রেনিং ও স্ট্রেচিং আরও আগেও শুরু করা যায়।

১২. জিম ছেড়ে দিলে কি শরীর খারাপ হয়ে যাবে?

উত্তর:
নিয়মিত শরীরচর্চা বন্ধ করলে ধীরে ধীরে পেশি সংকুচিত হতে পারে এবং ফিটনেস কমে আসতে পারে। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও হালকা একটিভিটি বজায় রাখলে দ্রুত খারাপ হয় না।

১৩. ওজন কমাতে শুধু কার্ডিও করলেই হবে?

উত্তর:
শুধু কার্ডিও নয়, ওজন কমাতে ওজন-উত্তোলন (strength training) ও পুষ্টিকর খাদ্য জরুরি। শক্তিশালী পেশি মেটাবলিজম বাড়ায়, ফলে চর্বি দ্রুত ঝরে।

১৪. জিমে শুরু করার আগে কী কী জিনিস সঙ্গে রাখতে হবে?

উত্তর:
আরামদায়ক পোশাক, স্পোর্টস জুতা, তোয়ালে, পানি বোতল, হালকা স্ন্যাকস এবং ব্যাগ।

১৫. জিমে যাওয়ার আগে বা পরে কত ঘন্টা ঘুম জরুরি?

উত্তর:
প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। ঘুমই শরীরের পেশি পুনর্গঠন ও রিকভারির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।

No comment yet, add your voice below!


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *